বালু ঘাট-হাট বাজার এজারাসহ বিভিন্নভাবে রাজশাহী কাটাখালি পৌর মেয়র আব্বাস মাসে প্রায় দুই কোটি টাকার পকেটে উঠে। রাজশাহীর বালুর ঘাট থেকে দিনে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা আসে। এছাড়া নগরীতে প্রতিদিন বসা টাটকা সবজির হাট, খড়খড়ি হাট থেকে দিনে আরও এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় হয়। ফলে সব মিলিয়ে মেয়র আব্বাস প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা লুফে নেন। মাসে কমপক্ষে দেড় কোটি টাকা মেয়রের পকেটে যায়।
সম্প্রতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের পর বিভিন্ন মহলে প্রতিবাদের ঝড় উঠলে সামনে আসে মেয়রের টাকার পাহাড়ের তথ্য। গত সোমবার (২২ নভেম্বর) রাতে মেয়র আব্বাস আলীর কথোপকথনের অডিও ভাইরাল হয়। ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপটিতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বানালে ‘পাপ হবে’ এমন কথাও বলতে শোনা গেছে মেয়রকে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের শেষের দিকের আলোচনার কিছু অংশের রেকর্ড এটি। গত আগস্টের মাঝামাঝিতে নিজ দফতরে ব্যবসায়ীদের নিয়ে এই বৈঠক করেন মেয়র। সরকারি নালার ওপর দোকান নির্মাণের উদ্দেশ্যেই ওই বৈঠক আয়োজন করা হয়েছিল। বৈঠক শেষে বৃষ্টিতে আটকে পড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নানান বিষয় নিয়ে কথা বলেন মেয়র। ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপটি এরই অংশ বিশেষ।
এর ঠিক আগে মেয়র আব্বাস নিজের বিপুল আয়ের বিবরণ দিতে শোনা যায়। অডিও ক্লিপের এই অংশটিও ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের হাতে হাতে। এতে মেয়র আব্বাস আলীকে বলতে শোনা যায়, ‘বাড়ি করতে গিয়ে মাটির তলেই তো এক কোটি টাকা চলে গেছে। একটা মানুষের কত টাকাই বা আর লিকুইড মানি থাকে?’ এ সময় তার আশেপাশে থাকা লোকজন তার তারিফ করে বলেন, রাজশাহীর মধ্যে তার বাড়িটা সবচেয়ে ভালো করতে হবে। তার কথার পিঠে মেয়র আব্বাস আলী নিজের আয়ের হিসেব দেন। তিনি বলেন, ‘গতবার বালুর ঘাট ৬ কোটি টাকায় ইজারা নিয়েছিলেন তারা ৪ জন মিলে। সেখানে তার মোট আয় হয়েছিল ১৯ থেকে ২০ কোটি টাকা। এবার ১০ কোটি টাকায় নিয়েছেন। সেখানে তার অংশীদারত্ব ৩০ শতাংশ। সে অনুযায়ী তিনি প্রতিদিন ঘাট থেকে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা আয় করেন।’
খড়খড়ি হাট বাৎসরিক ৪০ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন উল্লেখ করে মেয়র আব্বাস আলী বলেন, ‘ওই হাট আগে মাত্র ৩০ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হতো। সেখান থেকে দিনে তিনি এক লাখ টাকার কিছু বেশি আয় করেন। তবে এখন প্রতিকূল মৌসুমে আয় কিছুটা কম।’
এদিকে, এসব ঘটনায় মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) দিবাগত রাতে পৌর মেয়র আব্বাস আলীর নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনটি অভিযোগ দাখিল করেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তিন কাউন্সিলর। তাকে গ্রেফতারে বিভিন্ন আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্বাস আলী কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের পদে ছিলেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে গত পৌর নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ