ঢাকার কেরানীগঞ্জে কোন্ডা ইউনিয়নের মোল্লার হাট ব্রীজের নির্মাণ কাজ এখন দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ব্রীজের নির্মণ কাজের গতি নেই মর্মে একটি সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরে ব্রীজের নির্মান কাজের গতি দ্রুত বেড়েছে। নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত ব্রীজের কাজ শেষ না হওয়ায় দুই বছর বাড়িয়ে আগামী ২০২২সালের ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত পুনরায় ব্রীজের নির্মান কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এতে নদীর দুই পাড়ের লক্ষ লক্ষ মানুষের তীব্র ক্ষোভ থাকলেও ব্রীজের নির্মান কাজের গতি বাড়ায় কিছুটা হলেও মানুষের মাঝে শ্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে নির্মান কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নদীর দুই পাড়ের মানুষকে জীবনের ঝুকি নিয়েই নিত্যদিন খেয়া নৌকা পারাপারের মাধ্যমে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল অফিস সুত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের অর্থায়ন ও তত্ববধানে ব্রীজটি নির্মান করা হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান, টুঙ্গীবাড়ি, লৌহজং উপজেলা ও মুন্সীগঞ্জ সদর এলাকার মানুষ যাতে কেরানীগঞ্জ হয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যে রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ করতে পারে সেজন্য কোন্ডা ইউনিয়নের মোল্লার হাট এলাকায় ধলেশ্বরী শাখা নদীর উপর ২০১৮ সালের ১০ জুন ব্রীজটির নির্মান কাজ শুরু করা হয়।
২৫২ মিটার দৈর্ঘ এবং ১০মিটার প্রস্থের এই ব্রীজটির নির্মান ব্যায় ধরা হয়েছে ৩৩ কোটি ২৭ লক্ষ ৪২ হাজার ২৮৪ টাকা। সুরমা এন্টার প্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্রীজটির নির্মান কাজ শেষ হওয়ার মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর। কিন্ত ধলেশ্বী শাখা নদীর দুইপাড়ে কিছু ইটভাটা স্থান্তার ও অন্যান জটিলতার কারনে ব্রীজের নির্মান কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় আগামী ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত পুনরায় নির্মান কাজের সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সরেজমিন প্রতিবেদনে গিয়ে দেখা যায় মোল্লার হাট এলাকায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের একটি অফিস রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত লোকদের খোঁজ করা হলে কর্মরত শ্রমিকরা প্রতিষ্ঠানের সাইট ইনচার্জ আনিসুর রহমানের নাম বললেও তাকেও সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে শ্রমিকরা খুব দ্রতি গেিত তাদের কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। ব্রীজের ৮টি পিলারের মধ্যে ৬টি পিলারের নির্মান কাজ শেষ হয়েছে। নদীর মাঝখানে দুইট পিলারের কাজ এখনো পুরাপুরি শেষ করা হয়নি। নদীর দক্ষিন পাড়ে কয়েকটি পিয়ারে গার্ডারের কাজ শুরু করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, এপর্যন্ত ৪/৫বার ব্রীজের ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়েছে। ব্রীজের দুই পাড়ের জমি অধিগ্রহন নিয়েও জটিলতা দেখা দেয়ায় ব্রীজের নির্মান কাজ ধীর গতির মুখে পড়ে। এছাড়া চাহিদা মোতাবেক ব্রীজ নির্মান প্রকল্পে অর্থ বরাদ্ধ না থাকায় ব্রীজের নির্মান কাজ প্রায় মুখ থুবরে পড়ে।
নদীর উভয় পাড়ের একাধিক মানুষ জানান, দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় হাউজিং কোম্পানীসহ কয়েকটি হাউজিং কোম্পানী ওইসব এলাকায় কম দামে জমি কেনার জন্য ব্রীজের নির্মান কাজ ধীর গতিতে করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। তবে ব্রীজের নির্মান কাজের গতি বাড়ায় নদীর দুই পাড়ের মানুষের মাঝে কিছুটা আনন্দ ফিরে এসেছে। কোন্ডা ইউনিয়ন ৯নং ওয়ার্ড মেম্বর ইকবাল আহমদ নিবির বলেন, মোল্লাহ বাজার ব্রীজটি নির্মিত হলে এটির মাধ্যমে কেরানীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান, টুঙ্গীবাড়ি, লৌহজং উপজেলাসহ মুন্সীগঞ্জ সদরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করবে। খুব সহজেই ওইসব এলাকার মানুষ রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে। কেরানীগঞ্জের মানুষও সহজে মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় যাতায়াত করতে পারবে। ব্রীজের দুইপাড়ে গড়ে উঠবে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ব্রীজটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্মিত না হওয়ায় মুন্সীগঞ্জের ওইসব এলাকার মানুষকে নিত্যদিন জীবনের ঝুকি নিয়ে খেয়া পারাপার হতে হচ্ছে। এতে অনেক সময় জরুরী রোগী ও প্রসুতীকে নিয়ে খেয়া পার হয়ে হাসপাতালে সঠিক সময় পৌঁছতে না পারায় অনেক দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে। তাই আমরা দ্রুত এই ব্রীজটি নির্মানের দাবি জানাচ্ছি।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ শাজাহান আলী বলেন, করোনাকালীন সময় ও বর্ষার কারনে ব্রীজের নির্মান কাজ বন্ধ থাকে। তাছাড়া নদীর ¯্রােতের কারনে নদীর ভিতর একটি পিয়ারের সমস্যা হওয়ায় সাময়িকভাবে নির্মান কাজ বন্ধ রাখা হয়। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ব্রীজ নির্মান কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন জটিলতার কারনে ব্রীজের নির্ধারিত সময়ে ব্রীজের নির্মান কাজ শেষ না হওয়ায় আগামী ২০২২সালের ১৭ নভেম্বর ব্রীজের নির্মান কাজের নিধারিত সময় পুনরায় ঠিক করা হয়েছে। আশা করছি এখন দ্রুত গতিতে নির্মান এগিয়ে যাবে।
প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী জিএম মজিবুর রহমান (ঢাকা জেলা) বলেন, বিভিন্ন জটিলতা, করোনা মহামারীর কারনে ব্রীজের নির্মান কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় নির্মান কাজের সময় আমরা আরো দুই বছর বৃদ্ধি করে আগামী ২০২২সালে ১৭নভেম্বর পর্যন সময় নির্ধারিত করেছি। এখন দ্রুত গতিতে ব্রীজের নির্মান কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি বর্ধিত সময়ের মধ্যেই ব্রীজের নির্মান কাজ শেষ হবে।
ব্রীজটি নির্মিত হলে এটি কেরানীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের মধ্যে সেতু বন্ধন হিসেবে কাজ করবে। বর্তমান সরকারের দেশব্যাপী উন্নয়নের কর্মযজ্ঞের এই ব্রীজটি তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহারন। ব্রীজটি নির্মিত হলে ব্রীজের উভয় পাড়ে গড়ে উঠবে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান। এতে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে ।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ