ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

খুদে বিজ্ঞানীর আবিষ্কার, জ্বালানি বিহীন চলবে হোভারক্রাফট

প্রকাশনার সময়: ২৩ নভেম্বর ২০২১, ১৩:০৫ | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২১, ১৩:২৪

কোন ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাত্র ৯ বছর বয়সে বাতাসের মাধ্যমে পাখা ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে ক্ষুদে বিজ্ঞানী হিসেবে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয় শাওন। এর পর বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আবিষ্কার করেন একটার পর একটা আধুনিক প্রযুক্তি। শাওনের উদ্ভাবনের তালিকায় রয়েছে দেশ ব্যাপী আলোচিত জ্বালানি তেল ও চালক বিহীন সৌর চালিত গাড়ি, সী-প্লেন, সিকিউরিটি এলার্ম, স্মার্ট সুইস, মোবাইল সুইস, স্মার্ট ফ্রিজ, ড্রোন বিমানসহ আরো অনেক যন্ত্র।

উপজেলার মহিপুর সদর ইউপির মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক নাসির উদ্দিনের ছেলে মাহাবুবুর রহমান শাওন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ প্লানেটর কলেজের রোবোটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। সবশেষে ২৫ বছর বয়সে এসে সী-প্লেনের আদলে হোভারক্রাফট তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন গোটা এলাকায়। এটি জ্বালানী তেল বিহীন সৌর বিদ্যুতের সহায়তায় ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার গতিতে চলবে নদী পথে। বাবার আর্থিক সহায়তায় দীর্ঘ নয় মাস অক্লান্ত পরিশ্রমের পর এ হোভারক্রাফটি তৈরি করেছেন ক্ষুদে এই বিজ্ঞানী। সম্পূর্ণ ফাইভার ও এ্যালোমিনিয়াম দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এর অবকাঠামো। এতে রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির ধারণ ক্ষমতা মাপার যন্ত্র। মূলত চার আসন বিশিষ্ট এই হোভারক্রাফটে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করলেই বন্ধ হয়ে যাবে মেশিন। ধারণ ক্ষমতা স্বাভাবিক হলেই আবার চলতে শুরু করবে তার এই নতুন আবিষ্কার।

কথা হলে নয়া শতাব্দীকে শাওন জানান, “আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হঠাৎ করেই ২০১৯ সালে মাথায় আসে আমিও একটি হোভারক্রাফট তৈরি করে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় ভ্রমণ পিপাশুদের জন্য উন্মুক্ত করবো।

তিনি জানান, উন্নত দেশের সী-বিচে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য হোবারক্রাফট রয়েছে। সেই চিন্তা থেকেই মূলত আমি এটি আবিষ্কার করি। ইতোমধ্যে এই হোভারক্রাফট তৈরিতে তার ব্যয় হয়েছে ৪ লাখ টাকারও বেশি। তবে এর কাজ শত ভাগ সম্পূর্ণ করতে হাই ভোল্টেজ লিথিআম আয়ন ব্যাটারি জরুরি ভিত্ততে প্রয়োজন। যা অর্থাভাবে এখনও সংগ্রহ করতে পারেননি তিনি।

তবে সরকারি সহায়তা পেলে বাণিজ্যিকভাবে হোভারক্রাফট বাজারজাত করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিতে পারবেন বলে শাওনের দাবী।

মহিপুরের বাসিন্দা নিজা উদ্দিন জানান, শাওন আমাদের এলাকার গৌরব। ওর নতুন আবিষ্কার হোভারক্রাফটি আমাদের চালিয়ে দেখিয়েছে। দেখতেও অনেক সুন্দর। শাওনকে ভালো করে গাইড করলে সে আরো ভালো কিছু করবে।

শাওনের বাবা নাসির উদ্দিন জানান, ছোট থেকেই শাওনের খেলার সামগ্রী ছিলো ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ে সে বাতাসের সাহায্যে বিদ্যুৎ তৈরি করেছে। এবং সেই বিদ্যুৎ দিয়ে আমরা মোবাইল চার্জ দিয়েছি। এছাড়া জ্বালানী ও চালক বিহীন গাড়ী এবং এবার সে হোভারক্রাফট তৈরি করেছে। আমি আসলে এসব প্রযুক্তি উদ্ভাবনে শাওনকে উৎসাহ দিয়েছি। তিনি জানান, আমার জমিজমা বিক্রি করে হলেও তাকে সাহায্য করেছি। কিন্তু এখন আর পারছি না। ফলে সরকারের সহায়তার দাবী জানান তিনি।

কলাপাড়া সরকারী মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ইউসুফ আলী জানান, শাওনের অবিষ্কারগুলো আসলেই প্রশংসনীয়। তাকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ দিলে সে আরও ভালো কিছু করতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক নয়া শতাব্দীকে জানান, শাওন এর আগেও বেশ কিছু প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। তার সকল উদ্ভাবন প্রশংসনীয়। তাকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহায়তা করা হবে।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ