ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জনবল কাঠামো নিয়ে অসন্তোষ

প্রতিকার চেয়ে মন্ত্রী, সচিবসহ বিভিন্ন দফতরে চিঠি
প্রকাশনার সময়: ২০ নভেম্বর ২০২১, ১৮:১৫ | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২১, ১৮:১৮

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এপিএসসিএল) উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও কমছে কারিগরি বিভাগের জনবল। গত ১২ বছরে প্রতিষ্ঠানটির নতুন নতুন ইউনিট নির্মাণের মাধ্যমে উৎপাদন ক্ষমতা তিনগুণ বৃদ্ধি পেলেও অনুমোদিত জনবল কাঠামোতে কারিগরি বিভাগের জনবল ৭% কমিয়ে কারিগরি জনবল নির্ভর প্রতিষ্ঠানটিতে অকারিগরি জনবল ৭% বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে অনুমোদিত এই জনবল কাঠামো নিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মরত কারিগরি বিভাগের (টেকনিক্যাল) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ। তাদের দাবি এই জনবল কাঠামো বাস্তবায়িত হলে কারিগরি জনবল হ্রাস, পদোন্নতি বন্ধ ও ভবিষ্যতে বিভিন্ন কারণে কারিগরি পদগুলো বিলুপ্ত হতে পারে। শুধু তাই নয় কারিগরি জনবলের অভাবে লাভজনক প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতে অকার্যকর ও লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার আশংকা রয়েছে। এই জনবল কাঠামো স্থগিত ও বাস্তবসম্মত যৌক্তিক জনবল কাঠামো তৈরির দাবিতে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ও সচিবসহ বিভিন্ন দফতরে চিঠি দিয়েছে প্রকৌশলীদের সংগঠন বাংলাদেশ পানি ও বিদ্যুৎ প্রকৌশলী সমিতি ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ (আইইবি)।

এদিকে সিবিএ নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা না করে জনবল কাঠামো চূড়ান্ত করায় তারাও ক্ষুব্ধ এবং তা স্থগিত করে শ্রমিক-কর্মচারী স্বার্থযুক্ত যৌক্তিক জনবল কাঠামোর দাবি জানান। এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতি অবগত বলে জানিয়েছে এপিএসসিএল কর্তৃপক্ষ ও বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিভাগ সূত্রে জানাযায়, এপিএসসিএল এর নতুন জনবল কাঠামো তৈরির লক্ষ্যে ‘আর্নেস্ট এন্ড ইয়ং এলএপি’ নামক একটি বেসরকারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয় এপিএসসিএল কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ ৭ বছর (২০১৪ হতে ২০২১) এপিএসসিএল কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন উপ-কমিটির সাথে ৫০টির বেশি,কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের একাধিক এবং মন্ত্রণালয়ের উপ-কমিটির ৭টি সভায় আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে দেশের বিদ্যুৎ জেনারেশন কোম্পানির সাথে সমন্বয় করে একটি জনবল কাঠামো প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পেশ করে দায়িত্বপ্রাপ্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এ বাবদ পরার্মশক প্রতিষ্ঠানকে ৪০ লক্ষাধিক টাকা পরিশোধ করা হয়। জানা গেছে, গত মাসের শেষ দিকে (২৮ অক্টোবর) বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রস্তাবিত এ জনবল কাঠামো চূড়ান্ত হয়। চূড়ান্ত জনবল কাঠামোতে ৮১৬ জন কারিগরি (শতকরা ৬৪ ভাগ) এবং নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) ও মহাব্যবস্থাপক পদসহ ৪৬৬ জন (শতকরা ৩৬) অ-কারিগরি জনবলের প্রস্তাব করা হয়েছে। অ-কারিগরি বিভাগে পূর্বে নির্বাহী পরিচালক ও মহাব্যবস্থাপক দুটি পদ ছিল না।

কারিগরি কর্মকর্তাদের দাবী, ২০১০ সনে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এর আওতাধীন আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লি: (এপিএসসিএল) তে রূপান্তরের সময় জনবল কাঠামোতে ৬৬৭ জন কারিগরি (শতকরা ৭১ ভাগ) এবং ২৭০ জন (শতকরা ২৯ ভাগ) অ-কারিগরি জনবল ছিল। কিন্তু প্রস্তাবিত চূড়ান্ত জনবল কাঠামোতে অ-কারিগরি পদ বৃদ্ধি করে কারিগরি জনবল ৭% কমানোয় হয়। এতে কারিগরি বিভাগের, পদোন্নতিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ২০২৩ সালে এপিএসসিএল এর পুরাতন ৩টি ইউনিট বন্ধ হলে আরো ৩৪১ জন কারিগরি পদ বিলুপ্ত বা কর্মরতরা চাকুরীহীন হয়ে পড়ার আশংকাও রয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতে দক্ষ কারিগরি জনবলের অভাবে লাভজনক এ প্রতিষ্ঠানটি একটি অকার্যকর ও লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারে । তাই তারা এই জনবল কাঠামো স্থগিত করে, যৌক্তিক জনবল কাঠামো তৈরির প্রস্তাব নিয়ে এপিএসসিএল এর কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার আলোচনাসহ তাদের পেশাজীবী সংগঠনকে অবহিত করে। এ প্রেক্ষিতে এই জনবল কাঠামো স্থগিত ও যৌক্তিক জনবল কাঠামোর তৈরির দাবিতে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ বিভিন্ন বিভাগে আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি ও বিদ্যুৎ প্রকৌশলী সমিতি ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ (আইইবি)।

এদিকে প্রস্তাবিত জনবল কাঠামো নিয়ে এপিএসসিএল এর সিবিএ নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করা হয়নি বলে জানিয়ে তারা জনবল কাঠামোতে কর্মকর্তাদের পদ সংখ্যা বৃদ্ধি ও পদোন্নতির সাথে সাথে কর্মচারীদের পদ ও পদোন্নতি আনুপাতিক হারে বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে যৌক্তিক একটি জনবল কাঠামো তৈরি দাবি জানান তারা। এদিকে অ-কারিগরি (নন-টেকনিক্যাল) কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ এব্যাপারে কোন মন্তব্য না করে নিজেরা একই পদে কর্মরত ও পদোন্নতি বঞ্চিত বলে জানান।

এব্যাপারে এপিএসসিএল এর শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রস্তাবিত জনবল কাঠামো চূড়ান্ত করার আগে আমাদের সাথে কথা বলা হয়নি। তিনি আনুপাতিক হারে (১:৫:২৫) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদ সৃষ্টি ও পদোন্নতির দাবি জানিয়ে প্রস্তাবিত চূড়ান্ত জনবল কাঠামো স্থগিতের দাবি জানান।

এব্যাপারে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের প্রধান প্রকৌশলী শাহ আলম খান জানান অনুমোদিত জনবল কাঠামো একটি কারিগরি প্রতিষ্ঠানে মাথাবারি প্রশাসনে পরিণত হয়েছে।এই প্রতিষ্ঠানটি বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে উদ্ভূত বৈষম্যসমুহ নিরসনে উক্ত জনবল কাঠামো স্থগিত করে প্রয়োজনীয় সংশোধনসহ সুষমকরণের দাবী জানান তিনি।

এব্যাপারে আশুগঞ্জ বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী কামরুজ্জামান ভুইয়া জানান পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কোন মতামত না নিয়ে প্রকৌশলীদের অন্ধকারে রেখে জনবল কাঠামো চূড়ান্ত প্রস্তাব করেছে। যা অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত।এতে আমরা হতাশ এবং চাকুরী নিয়ে শঙ্কিত।প্রস্তাবিত জনবল কাঠামো বাস্তবায়িত হলে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আধুনিক মেশিনারিজ চালিয়ে রাখা হুমকির মুখে পড়বে।

এব্যাপারে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ,এম,এম সাজ্জাদুর রহমান বলেন, দেশের অন্যান্য বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় করে মন্ত্রণালয় জনবল কাঠামো চূড়ান্ত করেছে। এই বিষয়টি নিয়ে প্রকৌশলীদের মাঝে অসন্তোষ রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবহিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিরসন করা চেষ্টা করা হচ্ছে।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ