চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় চাষিদের মধ্যে বইছে খুশির জোয়ার। কৃষকদের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের ঝিলিক। সর্বত্রই সোনালি নতুন ধানের মৌ মৌ সুগন্ধ বয়ে যাচ্ছে। গ্রামে-গঞ্জের কৃষক পরিবার গুলোতে চলছে নতুন ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিগন্তবিস্তৃত মাঠ, বাঁশখালী জুড়ে সোনালী আমন ধানের হাসি। যেদিকে চোখ যায় শুধুই এখন পাকা সোনালী আমন ধান। উপজেলার গণ্ডামারা, সরল, ছনুয়া, শেখেরখীল, বাঁহারছড়া, খানখানাবাদ, সাধনপুর, পুকুরিয়া, কালিপুর, বৈলছড়ি, চাম্বল, শিলকূপ, পুঁইছড়িতে সোনালি ধান আর ধানে যেন বিলগুলো পরিপূর্ণ হয়ে আছে। সেখানে ধান কাটা, কাটা ধান খেত থেকে কৃষকের উঠানে নিয়ে আসা, ধান মাড়াইয়ের কাজ চলছে পুরোদমে। আবার অনেক বিলে দেখা যায় কৃষকরা পরিবারের ছোট-বড় সবাইকে দিয়ে ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করছেন। ফলে সব মিলিয়ে কষ্টের এই সোনালী ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সুত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলার ১৫,৭০০ হেক্টর জমিতে ব্রি-ধান ৮৭, ব্রি-ধান ৯০, হাইব্রিডসহ বিভিন্ন প্রজাতির ধান চাষ করা হয়েছে। পাশাপাশি লবনাক্ত এলাকায় চাষ হয়েছে বিনা ১০, ১৬, ও ১৭ ধান। এবারে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। তবে আমনের বাম্পার ফলন হওয়ায় লক্ষ মাত্রার চেয়েও বেশি হবে বলে জানায় তারা।
গণ্ডামারার কৃষক আব্দুল জব্বার বলেন, ‘এ বছর ১২ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি। যা অন্য বছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। ১১-১২ বিঘা জমি চাষ করে ৪১-৪২ হাজার টাকা খরচ হলেও উৎপাদন খরচ বাদেও চাষাবাদে লাভ হব। তবে কিছুটা ইঁদুরের উপদ্রব রয়েছে। যদি ইঁদুরের উপদ্রব না থাকতো তাহলে আমন ধানের ফলন আরও ভালো হতো।
পুকুরিয়া ইউনিয়নের কৃষক মোজাম্মেল রানা বলেন, ‘সাঙ্গু নদীর পাড়ে পতিত লবনাক্ত এক বিঘা জমিতে বিনা-১৭ লাগানো হয়েছিলো। এই ধানগুলোর বাম্পার ফলন হবে তা আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। আগামী বছর আরও কয়েক বিঘা জমিতে নতুন এই জাতের ধান রোপন করব।’
বৈলছড়ি ইউনিয়নের কৃষক মতিউর রহমান পাঠারী বলেন, ‘আমার মায়ের নেওয়া ৮ বিঘা বন্ধকি জমিতে ব্রি-ধান ৮৭ চাষ করেছি। এখন আমার ফসলি মাঠে ধান আর ধান। গত ৮ বছর ধরে ধান চাষ করি এর আগে কখনো এরকম বাম্পার ফলন হয়নি। তবে ধানের মূল্য কম থাকায় হতাশায় ভূগছেন তিনি।’
বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু ছালেক জানান, এ মৌসুমে উপজেলার ১৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ করা হয়েছে। যা আমাদের উৎপাদন লক্ষ মাত্রার চেয়ে বেশি। তাছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের উন্নয়ন সহায়তার (ভর্তুকি) মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে কম্বাইন্ড হারভেস্টার, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, রিপার, ধান মাড়াই যন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও রাজস্ব ও প্রণোদনায় বিনামূল্যে ১২০০ কৃষককে উন্নত জাতের বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। এবং কৃষি উপকরণের সংকটও দেখা যায়নি। সঠিক সময়ে কৃষি উপকরণ সরবরাহ, অন্যান্য মৌসুমের চেয়ে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় আমন ধানের বাম্পার হয়েছে।’
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ