আজ ১৯ নভেম্বর সাতক্ষীরার শ্যামনগর হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বর শ্যামনগরে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করার মধ্য দিয়ে দেশের প্রথম যুদ্ধে মুক্ত অঞ্চল হওয়ার গৌরবান্বিত হয় শ্যামনগরবাসি।
বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে সাতক্ষীরা জেলার সর্বশেষ সুন্দরবন সংলগ্ন উপজেলা শ্যামনগরে ১৯৭১ সালের ১৯ আগস্ট পাক বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে প্রাণ হারায় ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা যথাক্রমে সুবেদার ইলিয়াস, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। এ দিনে আরও কয়েকজন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়। আকষ্মিক এ আক্রমণের বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তুললেও শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেনি। গেরিলা যুদ্ধের কৌশল হিসেবে মুক্তিযোদ্ধারা লে. মাহফুজ বেগের নেতৃত্বে শ্যামনগর সদর থেকে ক্যাম্প পিছিয়ে নেয়। আর এ দিন থেকে পাক বাহিনী স্থায়ীভাবে ঘাটি গাড়ে শ্যামনগরে। এ সময় থেকে টানা ৩ মাস পাকবাহিনী শ্যামনগর দখলে রাখে এবং এ সময়ে তাদের হাতে প্রাণ হারায় কয়েকজন নিরীহ বাঙালি।
শ্যামনগরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার গাজী আবুল হোসেন জানান, টানা তিন মাসে পাক বাহিনী শ্যামনগর সদরে ৫-৬ বার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। তন্মধ্যে শ্যামনগর পাক হানাদার ঘাটিতে এক দিনে চারিদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধারা এ্যাম্বুশ করে এবং টানা ৩ ঘণ্টা যুদ্ধের পর পাক সেনা ৪ জন নিহত হয়। এ সময়ের মধ্যে শ্যামনগরের কৈখালী, ভেটখালী, হরিনগর, রামজীবনপুর, গোপালপুর পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। জানা যায় কৈখালী ও হরিনগর এলাকায় নৌকমান্ড ও মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা বাহিনী যৌথভাবে টানা তিন ঘণ্টা ভয়াবহ যুদ্ধে অংশ নেয়।
শ্যামনগর বিভিন্ন এলাকায় পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে ও ১৮ নভেম্বর রাতের আঁধারে শ্যামনগর ত্যাগ করে। পর পরই মুক্তিযোদ্ধারা এসে শ্যামনগর দখল নেয়। এরপর স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে ১৯ নভেম্বর শুক্রবার শ্যামনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড আলোচনাসভা, দোয়া অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার দেবী রঞ্জন মণ্ডল বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের হল রুমে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এসএম জগলুল হায়দার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ. ন. ম আবুজর গিফারী। আরও জানা যায়, দিবসটি উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ, লাঠি খেলা, বাদ্য-বাজনার আয়োজনসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ