ঢাকা, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ১ রবিউস সানি ১৪৪৬

সুদখোরদের ভয়ে এসএসসি দেয়া হলো না সোলমানের

প্রকাশনার সময়: ১৮ নভেম্বর ২০২১, ২০:৫৭

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের নাউড়ি গ্রামের ব্যবসায়ী আজিজুল হক। স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে গিয়ে তিনি আজ নিঃস্ব। দাদন ব্যবসায়ীদের চাপে পরিবার নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। এদিকে ঋণদাতারা আজিজুলের বসতঘরে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। আর অজ্ঞাতস্থানে থেকে তার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিলেও সুদখোরদের হুমকির মুখে পরীক্ষার কেন্দ্রে যাওয়া হয়নি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে সোলমান হক (১৬) স্থানীয় মধুপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই প্রতিষ্ঠানের পাঁচজন শিক্ষার্থী চলতি এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে আসেনি। তাদের মধ্যে একজন সোলমান হক। নিজের কোনো পুঁজি না থাকায় স্থানীয়দের কাছ থেকে সুদে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে ধানের ব্যবসা করতেন আজিজুল হক (৫০)। সময়মতো লাভ দিতে না পারায় সেই টাকা হয়ে যায় পাহাড়সম। অবশেষে সুদে আসলে সেই টাকার অঙ্ক দাঁড়ায় প্রায় অর্ধকোটিতে। পরিশোধ করতে না পারায় একসময় পাওয়নাদারদের চাপে পড়ে পরিবার নিয়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন আজিজুল।

মধুপুর উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলাম এ তথ্য দিয়ে জানান, তাঁর বিদ্যালয় থেকে মোট ২৮৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে চলতি এসএসসি পরীক্ষায় সোলমানসহ ৫ জন অংশ নেয়নি। তবে দাদন ব্যবসায়ীদের ভয়ে সোলমান পরীক্ষায় অংশ নেয়নি বিষয়টি সত্য কিনা তা তিনি এ মূহুর্তে জানাতে পারেননি। অনুপস্থিত অন্য পরীক্ষার্থীদের নামও এখন তিনি জানাতে পারেননি। আগামী রোববার অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের নাম জানাতে পারবেন বলে জানান তিনি।

তবে আরেক সহকারী শিক্ষক আব্দুল মান্নান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সোলমান হক দাদন ব্যবসায়ীদের ভয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। এছাড়াও বাকী চার পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ জন সৌদী আরবে চলে গেছেন। বাকী তিন পরীক্ষার্থী কেনো পরীক্ষায় অংশ নেয়নি তা তিনিও জানাতে পারেননি।

দাদন ব্যবসায়ীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়ানো আজিজুল হকের মামী রেহেনা আক্তার (৫৩) বলেন, সুদের ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা পরিশোধের চাপে রাতের আঁধারে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন আজিজুল। তিনি আরও জানান, আজিজুলের দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। ছেলে সোলমান হক মধুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। সে এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। পাওনাদারদের ভয়ে বাবা গ্রামছাড়া হওয়ায় পুত্র পরীক্ষা দেওয়ার জন্য এলাকায় আসতে সাহস পায়নি।

এ সময় মোছা. লাকী আক্তার (৩৫) নামে এক নারী দাবি করেন, তাঁর স্বামী বাচ্চু মিয়ার পাওনা সাত লাখ।

মগটুলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সালেহ মোহাম্মদ বদরুজ্জামান মামুন বলেন, একটি পরিবারের ছেলে বাবার ঋণের কারণে পরীক্ষা দিতে না পারা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি জানতে পারলে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারতাম।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বলেন, ‘এমন কেনো ঘটনা আমার জানা নেই। ঘটনা সত্য হয়ে থাকলে ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ