পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় ও ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ি এলাকার ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক কষ্টে পানি সংগ্রহ করে এনে খাওয়াসহ রান্না-বান্নার কাজে ব্যবহার করতে হচ্ছে এখানকার মানুষদের। অগভীর নলকূপগুলো থেকে পানি না উঠায় বছরের শুষ্ক মৌসুমের অন্তত ১০ মাস পানির অভাবে এ কষ্ট করতে হয় স্থানীয়দের। এ সমস্যা লাঘবে এসব এলাকায় সাবমারসিবল পাম্প বসানোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকা কালিনগর, ডেফলাই, ফাকরাবাদ, ভারুয়া, মরিয়মনগর, জারুলতলা, তাওয়াকুচা, পানবর, গুরুচরণ দুধনই, গজনী গান্ধিগাঁও, বাকাকুড়া, হালচাটি, নওকুচি, দীঘিরপাড়, ডাকাবর, শ্রীবরদী উপজেলার কর্ণঝোড়া ও রানীশিমুলসহ অন্তত ২০টি এলাকার মাটির নিচে প্রচুর পাথর থাকায় সাধারণ নলকূপ স্থাপন করা সম্ভব হয় না। আবার বেশ কয়েক জায়গায় চেষ্টার পর অগভীর নলকূপ স্থাপন করা সম্ভব হলেও পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বছরের ৬ মাস ওইসব নলকূপে পানি ওঠে না। ওইসময়ে পুকুর, খাল, বিলের পানিও শুকিয়ে যাওয়ায় গোসল পর্যন্ত করতে পারেন না এখানকার লোকজন। তাই স্থানীয়দের দাবি, এসব এলাকায় যাতে সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় গভীর নলকূপ বসানোর ব্যবস্থা করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ি অঞ্চলে পানির লেয়ার অনেক নিচে থাকায় আর মাটির নিচে প্রচুর পাথর থাকায় এসব এলাকায় সব ধরনের গভীর নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। একমাত্র বিদ্যুৎচালিত গভীর সাবমারসিবল পাম্প বসিয়ে পানি উত্তোলন করা সম্ভব। কিন্তু এতে কমপক্ষে ৩ লক্ষ টাকা খরচ হয়। যা এখানকার সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।
এসব এলাকায় ব্যক্তি মালিকানায় সচ্ছল দু’একজন কৃষক বিদ্যুৎচালিত গভীর সাবমারসিবল পাম্প বসিয়েছেন। ওই পাম্প থেকে পানি নেওয়ার জন্য শুষ্ক মৌসুমে আশপাশের লোকজন জগ, বালতি, কলস, বোতল নিয়ে ভিড় করেন। দুর-দুরান্ত থেকে অনেক মানুষ ভ্যানগাড়ি করে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করে নিয়ে যান এসব পাম্প থেকে।
সারিকালিনগর গ্রামের জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। একটা টিওবওয়েল পুতছিলাম। এহন পানি ওঠে না। অনেক কষ্ট কইরা দূরে শাজাহান ভাইয়ের পাম্প থেকে পানি নিয়ে যাই শুধু খাওয়ার জন্য। পানির অভাবে দু’একটা পুকুরের পচা পানিতে গোসল কইরা নানা অসুখ অয়। আমরা এই ভোগান্তির অবসানে সাবমারসিবল পাম্প চাই।’
একই গ্রামের গৃহিণী মঞ্জুরা বেগম। রোজিনা আক্তার ও আশুরা বেগমসহ অনেকেই জানান, অনেকদিন থেকে আমরা রান্নাবান্না আর খাওয়ার জন্য এইভাবে পানি টাইনা নিয়া যাই। আমরা আর কত কষ্ট করমু। মাইনষের বাড়ি থাইক্কা কত কথা হুইনা পানি আনতে অয়।
সারিকালিনগর এলাকার কৃষক শাহজাহান আলী জানান, আমি ধান ক্ষেতে পানি দিতে একটি বিদ্যুৎচালিত সাবমারসিবল পাম্প বসিয়েছি। শুকনো মৌসুমে এলাকায় কোন টিউবওয়েলে পানি ওঠে না। তখন আমার পাম্প থেকেই এ এলাকার মানুষ পানি নিয়ে যায়। মেশিন চালু করলেও সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এতে তাদেরও অনেক কষ্ট হয়, আমারও অসুবিধা হয়। এরপরও মানুষগুলোর কষ্ট দেখে কিছু বলি না। এ এলাকায় সরকারি খরচে দু’একটি সাবমারসিবল পাম্প বসালে এলাকার মানুষের দুর্ভোগ কমতো।
এ ব্যাপারে শেরপুর জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ছামিউল হক জানান, পাহাড়ি এলাকায় পানি সঙ্কট নিরসনে আমাদের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। যেসব এলাকায় পানির সমস্যা বেশি, ওইসব এলাকায় বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে গভীর নলকূপ ও সাবমারসিবল পাম্প বসানো হচ্ছে। আরও চাহিদা দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে পর্যায়ক্রমে সব গ্রামেই পাম্প স্থাপন করা হবে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম জানান, আমাদের উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে শুষ্ক মৌসুমে নলকূপে পানি ওঠে না। আমরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে কিছু কিছু জায়গায় সাবমারসিবল পাম্প বসাচ্ছি। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আমরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে চাহিদা পাঠিয়েছি। আশা করছি খুব শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ