শব্দদূষণে অতিষ্ঠ আমতলী পৌরবাসী। প্রতিদিন সকাল থেকে অধিক রাত পর্যন্ত মাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রচার চালানো এবং ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো হয়। প্রতিকারের জন্য আইন থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। নীরব ঘাতক ভয়ানক ক্ষতিকর শব্দদূষণ থেকে মানুষকে রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি সচেতন নাগরিকদের।
জানা গেছে, আমতলী পৌর শহরে প্রতিদিন সকাল থেকে অধিক রাত পর্যন্ত ডিজেল ও পেট্রোলচালিত ইঞ্জিন বাস, ট্রাক, লরি, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, টেম্পো, অটোরিকশা, টমটম মাহেন্দ্র ও থ্রিহুইলারের হাইড্রোলিক হর্ন ও ডিজেলচালিত জেনারেটরের মাধ্যমে শব্দদূষণ হয়।
এছাড়াও রোগীদের আকৃষ্ট করতে চিকিৎসকের নামে প্রচার, ওয়াজ মাহফিলের প্রচার, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বয়লার মুরগি, মাছ, মাংস বিক্রিসহ মাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রচার চালানো হয়। এতে পৌর শহরে শব্দদূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হাইড্রোলিক হর্ন ও মাইকের শব্দ মানুষের কানের জন্য যন্ত্রণাদায়ক। শব্দদূষণের কারণে মানুষের মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত শব্দ উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, মাথা ধরা, বদহজম, পেপটিক আলসার এবং অনিদ্রার কারণ বলে জানান চিকিৎসকরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ক্ষমতাবলে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ উল্লেখ আছে, শব্দদূষণ করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ আইন অমান্য করলে প্রথমবার এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।
এ সকল নিয়মনীতি ও আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিদিন আমতলী পৌর শহরে মাইকে প্রচার ও বিভিন্ন গাড়ির হাউড্রোলিক হর্ন অহরহ বেজে যাচ্ছে। এতে মারাত্মক শব্দদূষণ হচ্ছে। পৌরবাসীকে শব্দদূষণ শেষে রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।
আমতলী উপজেলা পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুল মুনয়েম সাদ বলেন, শব্দদূষণের কারণে শ্রবণশক্তি ও মেমোরি কমে যায়। কানের টিস্যুগুলো আস্তে আস্তে বিকল হয়ে পড়ে তখন সে স্বাভাবিক শব্দ শুনতে পায় না। শিশুদের মধ্যে মানসিক ভীতির সৃষ্টি হয়। মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে মানুষের করোনারি হার্ট ডিজিজ, কণ্ঠনালির প্রদাহ, উচ্চ রক্তচাপ, নিদ্রাহীনতা, আলসার ও মস্তিষ্কের রোগ হতে পারে। তিনি আরো বলেন, হাসপাতাল এলাকায় মাইকিং করা নিষিদ্ধ কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিদিন যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো হচ্ছে এবং মাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রচার চালানো হয়। ক্ষতিকর শব্দদূষণ থেকে মানুষকে রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
বরগুনা জেলা পরিষদ সদস্য আরিফ উল-হাসান আরিফ বলেন, পৌর শহরে শব্দদূষণ রোধে কোনো পদক্ষেপ নেই। শব্দদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই।
আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মো. মতিয়ার রহমান বলেন, পৌরবাসীকে শব্দদূষণের হাত থেকে রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। শব্দদূষণ রোধে সচেতনতা তৈরিতে বিশেষ সভা করা হবে। অন্যথায় এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেব।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ