নওগাঁয় চলতি মৌসুমে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে আমন ধানের সোনালি শীষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। দৃষ্টিসীমা ছাপিয়ে চারদিকে দুলছে আমনের শীষ। আর এ দোলায় লুকিয়ে আছে হাজারও কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। দিগন্তজোড়া সোনালি ফসলের মাঠ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বিকশিত করে তুলেছে। জেলার হাজারও কৃষক পরিবারের চোখে মুখে এখন স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশা। কিন্তু এই স্বপ্ন পূরণের আগেই পোকার আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। কৃষকরা বলছেন, কৃষি অফিস থেকে কোন পরামর্শ না পেয়ে দোকানদাররা যে কীটনাশক ব্যবহার করতে বলছে সেটি ব্যবহার করেও কোন প্রতিকার মিলছে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় মোট ১ লাখ ৯৭হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে নওগাঁ সদর উপজেলায় ৯ হাজার ৯২০হেক্টর, রানীনগরে ১৮হাজার ৬৫০ হেক্টর, আত্রাইয়ে ৬হাজার ৭০০ হেক্টর, সাপাহারে ৯হাজার ৮০০ হেক্টর, ধামইরহাটে ২০হাজার ৩২০ হেক্টর, মহাদেবপুরে ২৮হাজার ৮৯০ হেক্টর,পত্নীতলায় ২৭হাজার ২০০ হেক্টর, নিয়ামতপুরে ২৯হাজার ৯০৫ হেক্টর, বদলগাছীতে ১৪হাজার ৩২৫ হেক্টর, পোরশায় ১৫হাজার ৫৫০ হেক্টর এবং মান্দায় ১৫হাজার ৮৫০ হেক্টর জমি।
জেলার সদর, বদলগাছী, রানীনগর ও আত্রাই উপজেলায় ঘুরে দেখা গেছে ধানে পোকার আক্রমণের এমন চিত্র। কৃষকরা বলছেন-এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় ধান চাষ করতে সুবিধা হয়েছে। কিন্তু শেষ সময়ে পোকার আক্রমণ দেখা দেওয়ায় আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। এই অবস্থায় কৃষি অফিস থেকে কোনো পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে না, কোন ওষুধ ব্যাবহার করলে এর প্রতিকার পাওয়া যাবে। তাই বাধ্য হয়ে বাজার থেকে দোকানদার যে কীটনাশক ব্যবহার করতে বলছে সেটি ব্যবহার করেও কোন প্রতিকার মিলছে না।
সদর উপজেলার দয়িপুর গ্রামের কৃষক আফজাল ও আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এ মাঠে প্রায় ৯ শতাংশ হারে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠে পাওয়া যায় না। পোকার উপদ্রব ঠেকাতে কীটনাশক দোকান থেকে ইচ্ছেমত কীটনাশক নিয়ে এসে ধানে স্প্রে করতে হয়। এতে অনেক সময় কাজ হয়, আবার হয় না। পোকার আক্রমণ হওয়ায় কৃষকদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।’
রানীনগর উপজেলার কৃষক নাজমুল হক বলেন, ‘এবার ১ বিঘা জমিতে স্বর্ণা ৫ জাতের আমনের আবাদ করেছেন। এ আবাদ করতে বিঘা প্রতি ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ হয়। জমিতে দু’একটি সেচ দিতে হবে। পোকার উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে তাতেও কোন কাজ হচ্ছে না।’
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মো. সামশুল ওয়াদুদ বলেন, ‘আবহাওয়া ভাল থাকায় এ বছর ভাল ফলন হয়েছে। পোকা মাকড়ের তেমন আক্রমন নাই বললেই চলে। তবে কৃষকদের অসর্তকতায় কিছু সমস্যা হলে হতে পারে। উপসকারি কৃষি কর্মকর্তাদের সবসময় সার্বিক পরামর্শ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’ তবে ফলের কোন বিপর্যয় হবে না বলে জানান তিনি।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ