পরিবারের আর্থিক অসংগতির অভাব মাথায় নিয়েই যেন জন্ম নিয়েছেন বাবুল মিয়া। দারিদ্র্যের কারণে বেশিদূর লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি তার। বাবা ছিলেন দরিদ্র কৃষক। বিয়ের পর বাবার রেখে যাওয়া সামান্য জমি চাষাবাদ করে সংসার চলতো না। তাই অভাবের সংসারে দুমুঠো খাবারের সন্ধ্যানে ঢাকায় গিয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরী নেন বাবুল। কিন্তু চাকরীর সামান্য বেতনে সংসারে অভাব ছিল নিত্য সঙ্গী। ফলে মাত্র কয়েক মাস চাকরি করেন তিনি। পরে চাকরী ছেড়ে ঢাকা থেকে ফেরেন গ্রামে।
বাবুল মিয়া ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের রামগোপালপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা। তিনি ওই এলাকার মৃত মৃত আবুল হাসেমের ছেলে।
বাড়ি ফিরে কিছুদিন বেকার অবস্থায় কাটিয়ে বাবুলের মাথায় চিন্তা আসে আমাকে বসে থাকলে চলবে না, কিছু একটা করতেই হবে। সেটি ২০১৪ সালে কথা। তখন বাবুল মিয়া বাবা আবুল হাসেম বেঁচে আছেন।
সে সময় স্থানীয় মৎস্য চাষীদের পরামর্শে বাবার কাছ থেকে এবং নিজের উপার্জিত ৩০ হাজার টাকা পুজি নিয়ে নিজের ২৫ শতাংশ জমির পুকুরে ১ কেজি গুলশা মাছের রেনু দিয়ে চাষ শুরু করেন। এরপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সেই একর পুকুর থেকে তিনি এখন ১৫টি পুকুরের মালিক। মাছচাষ করে জীবনের বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন তিনি। কোন প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্থানীয় চাষীদের পরামর্শে তিনি ঘুরিয়েছেন জীবনের মোড়।
এ বিষয়ে কথা হলে বাবুল মিয়া বলেন, ‘৩০ হাজার টাকার পুজি নিয়ে একটা পুকুরে ২০১৪ সালে মাছ চাষ শুরু করি। এখন আমার ১৫ টি পুকুর আছে। এই ১৫ টি পুকুর থেকে বছরে প্রায় এক কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়। এখন আমার মাছের খামারে ১০ জন কর্মচারী কাজ করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় মৎস্য অফিস থেকে কোন সহায়তা পাননি। মাছ চাষ বিষয়ে কোন পরামর্শ পেলে আরও বেশি মাছ উৎপাদন করতে পারতেন বলে জানান।’
এছাড়াও তিনি জানান, করোনাকালে মাছের চাহিদা কম থাকায় মাছের দাম কমে যায়। তবে এখনো মাছের দাম তেমন বাড়েনি, অন্যদিকে বছরে কয়েকবার মাছের খাদ্যের দাম বেড়েছে। এমতাবস্থায় সরকার যদি মাছের খাদ্যের দাম কমানোর দিকে নজর দিত তাহলে হয়তো, আমরা আরও বেশি লাভবান হতে পারতাম।
এ বিষয়ে গৌরীপুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জান্নাত-এ হুর বলেন, ‘বাবুল মিয়া একজন সফল মৎস চাষী। তিনি মাছ চাষ করেই সফল হয়েছেন। তিনি অনেককেই মাছ চাষে আগ্রহী করে তুলেছেন।’
তিনি জানান, ‘উপজেলায় ৮ হাজারেরও বেশি চাষি রয়েছেন। মাঠ পর্যায়ে মৎস অফিসের কর্মী খুব কম। তাই সবাইকে পরামর্শ দেয়া সম্ভব হয় না। তবে মাছ চাষীরা পরামর্শ চাইলে তাঁদেরকে সকল ধরণের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।’
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ