ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কোনো নির্দেশনা মানছে না গণপরিবহন

প্রকাশনার সময়: ১৫ নভেম্বর ২০২১, ০৭:৩৩
সংগৃহীত ছবি

চট্টগ্রামে সরকার নির্ধারিত কোনো নির্দেশনাই মানছে না গণপরিবহনগুলো। প্রায় বেশিরভাগ গণপরিবহনে বর্ধিত ভাড়া আদায় নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তেলে চালিত পরিবহনগুলোর ভাড়া বাড়ানো হলেও ডিজেলে চালিত অজুহাত দেখিয়ে সিএনজিচালিত বাসেও আদায় করা হচ্ছে বর্ধিত ভাড়া। অনেক গাড়িতে নতুন ভাড়ার চার্ট না থাকায় বাস হেলপারদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।

এ কারণে হেলপার ও যাত্রীদের মধ্যে হচ্ছে বাকবিতণ্ডা। এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে কয়েক জায়গায়। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর লালখানবাজার এলাকায় ৫ টাকার ভাড়া ৮ টাকা দাবি করার প্রতিবাদ করায় চলন্ত বাস থেকে আব্দুল হামিদ (৫৫) নামে এক যাত্রীকে হেলপার লাথি মেরে ফেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার শিকার আবদুল হামিদ মারাত্মকভাবে আহত হন। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রী মামুন উর রশীদ জানান, ৮ টাকার ভাড়া ৫ টাকা দিলে হেলপারের সাথে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ওই যাত্রীকে লাথি মেরে নিচে ফেলে দেন বাসটির হেলপার।

এরপর ৯৯৯-এ কল করেন তিনি। দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে যাত্রীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। বাসটিকে জব্দ করে চালককে আটক করেছে পুলিশ। তবে হেলপার পালিয়ে গেছে। কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন জানান, ৫ টাকার ভাড়া ৮ টাকা দাবি করায় কথা কাটাকাটির জেরে এক বয়স্ক যাত্রীকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দেয়া হয়। ঘটনার পর চট্টমেট্টো জ-১১-১৮৭২ নম্বরের বাসটি জব্দ করা হয়েছে। বাসটির ড্রাইভারকে আটক করা হয়েছে। তবে হেলপার পালিয়ে গেছে।

এদিকে সিএনজিচালিত গণপরিবহন চিহ্নিত করতে বিশেষ রঙের শনাক্তকরণ চিহ্ন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ। এছাড়াও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি তদারকিতে আছেন বিআরটিএর দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তারা নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সিএনজিচালিত বাস ডিজেলে চলার কথা বলে বেশি ভাড়া নিচ্ছে কি-না তা দেখছেন।

বিআরটিএর দুই আদালতের নেতৃত্বে দেয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একিমিত্র চাকমা (আদালত-১১) ও শাহরিয়ার মুক্তার (আদালত-১৩) বলেন, কয়েকদিন ধরে নগরীর বেশ কয়েকটি জায়গায় অবস্থান করি। ডিজেলচালিত পরিবহনের পাশাপাশি সিএনজিচালিত পরিবহনেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি নজরে আসে। আমরা প্রথমে প্রাথমিকভাবে তাদের সতর্ক করেছি, কোনো আইন প্রয়োগ করিনি। এরপর মামলা ও জরিমানা প্রদান করেছি। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। তারা আরো বলেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে এক টাকাও বেশি নিতে পারবে না গাড়িচালকরা। আমাদের সঙ্গে বিআরটিএর একজন মোটরযান পরিদর্শক থাকেন। তিনি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত দেন। নতুন ভাড়া কার্যকরের পর যাত্রীদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তাদের অভিযোগ, দৈনন্দিন আয় বাড়েনি, কিন্তু ভাড়া বেড়েছে।

অন্যান্য খরচ বেড়েছে। এটি তাদের ওপর একটি বিশাল চাপ তৈরি করেছে। এখন সব বাসই ডিজেলচালিত দাবি করে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে। আর কোনো বাস ডিজেলচালিত না সিএনজিচালিত সেটি বাইরে থেকে বোঝা সম্ভব না। ফলে সরকারের উচিত এটি নিশ্চিত করে বাসে মার্ক করে দেয়া বা স্পষ্ট উল্লেখ করে দেয়া। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে টানা তিন দিন বন্ধ থাকার পর ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করলে গত ৭ নভেম্বর রাত থেকেই রাস্তায় নামে গণপরিবহন।

এদিন বিকেলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে পরিবহন মালিকদেও বৈঠকে নতুন ভাড়া পুনর্নির্ধারিত হয়। এতে জানানো হয়েছিল, মহানগর এলাকায় প্রতি কিলোমিটারে বাস ভাড়া ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ১৫ পয়সা করা হয়েছে। আর মিনিবাসের ক্ষেত্রে ১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ২ টাকা ৫ পয়সা। এক্ষেত্রে বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা এবং মিনিবাসে ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশে যাত্রীকল্যাণ সমিতি সংবাদ সম্মেলনে গণপরিবহনের এই বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাখ্যান করেছিল।

সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী পুনর্নির্ধারিত এ ভাড়া ‘মালিকদের স্বার্থরক্ষার জন্য নির্ধারিত’ হয়েছে দাবি করে ‘যাত্রীবান্ধব ভাড়া’ নির্ধারণ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, স্বল্প দূরত্বের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে, যদিও সরকার ভাড়া বাড়িয়েছে ২৭ শতাংশ।

নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় বাস হেলপারদের সাথে কথা হলে তারা ১০ টাকার ভাড়ার স্থলে ১৫ টাকা আদায় করছেন বলে জানান। যদিও তা নেয়ার কথা ১২ টাকা ২৭ পয়সা বা ১৩ টাকা। আবছার উদ্দিন ভুঁইয়া নামের এক যাত্রী ওই বাসে করেই ওয়াসা মোড় থেকে দুই নম্বর গেট আসছিলেন। তার কাছে ১৫ টাকা নেয়া হলে প্রতিবাদ করে ভাড়ার তালিকা দেখতে চাইলেন। কিন্তু হেলপার তা দেখাতে না পারায় শুরু হলো কথা-কাটাকাটি। এক পর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হয়। এদিকে ডিজেলচালিত ও সিএনজিচালিত পরিবহন চেনার জন্য শনাক্তকরণ চিহ্ন ব্যবহার করছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। গ্যাসে সবুজ ও ডিজেলচালিত গণপরিবহনে লাগানো হচ্ছে লাল রঙের স্টিকার।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন এতে করে গণপরিবহনে তর্ক-বিতর্ক কমবে। যাত্রীরা হয়রানি থেকে রেহাই পাবে। শনিবার সকাল থেকে স্টিকার লাগানোর কার্যক্রম শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১১টায় শুরু হওয়া এ কার্যক্রম বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে। নগরীর দুই নম্বর গেট, টাইগারপাস মোড়, আগ্রাবাদ মোড়, কাস্টমস মোড়ে এ স্টিকারগুলো লাগানো হয়।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ বলেন, নগরীর চারটি স্পটে এ স্টিকারগুলো লাগানো হয়েছে। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের তালিকা অনুযায়ী আমরা গণপরিবহনে লাল ও সবুজ স্টিকারগুলো লাগিয়ে দিচ্ছি। বেশি ভাড়া আদায় করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ