জলকদর খালের ওপর দাঁড়িয়ে আছে পুঁইছড়ি-ছনুয়া বেইলি সেতু। দীর্ঘদিন ধরে এ সেতুটির পাটাতন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পরে তা সংস্কার না হওয়ায় এবং সংস্কারের বিকল্প পথ না থাকায় বাধ্য হয়েই বাঁশ দিয়ে সেতু মেরামত করলেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি ও ছনুয়া ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের চলাচলের একমাত্র পথ এই বেইলি সেতু। প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন শিক্ষার্থীসহ দুই গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। হাঁটার সময় একটু এদিক সেদিক হলেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। সেতুটি এলাকাবাসীর কাছে পঙ্গু ব্রীজ নামেও পরিচিত।
এ সেতুর উপরে ওঠে দেখা যায় সেতুর ৮০% পাটাতন নষ্ট হয়ে গেছে। যার কারণে যান চলাচল তো দূরের কথা, জনসাধারণের হাঁটাচলাও বেশ কষ্টসাধ্য। যে কোন মুহুর্তে ঘটে যেতে পারে বড় কোন দুর্ঘটনা।
সম্প্রতি এই সেতু দিয়ে পারাপারের সময় রাজাখালী ফৈজুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী নষ্ট হয়ে যাওয়া পাটাতনে পা আটকে মারাত্মক আহত হয়। এরপর সেতুটি সংস্কারের জন্য এলাকাবাসী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোন প্রতিকার না পেয়ে এলাকার ২০/২৫ জন তরুণ স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশ দিয়ে সেতু মেরামতে এগিয়ে এসেছেন।
স্বেচ্ছায় সেতু মেরামত কাজে অংশ নেওয়া দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি রাজাখালী ফৈজুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ব্রীজটি পার হতে গিয়ে পাটাটনে পা আটকে আহত হয়। বর্তমানে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও পুঁইছড়ি পন্ডিতকাটা গ্রামের এক ছেলে মাথায় করে লাকড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় পা ফসকে পড়ে যায়। বিষয়টি আমাদের ইসলামী তরুণ কাফেলা সংগঠনের পক্ষ থেকে সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল হক চৌধুরী সাহেবকে জানালে তিনি আমাদের ৩০ হাজার টাকার বাঁশ কিনে দিয়েছেন। তাতে আমরা বাঁশের বেড়া বানিয়ে জনসাধারণের চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কয়েক দিনের মধ্যে আমরা কাজ শেষ করতে পারব। আশা করি এই বাঁশের কারণে জনসাধারণ অন্তত কয়েকমাস নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে।’
স্থানীয় মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘জনগুরুত্বপূর্ণ এ বেইলি সেতুর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কারণে উপজেলার প্রধান সড়কের সাথে আমাদের এ উপকূলীয় অঞ্চলের লোকজনের যাতায়ত ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী মহিলা রোগী, বৃদ্ধাদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। সভ্যতার চরম উৎকর্ষতায় এ ধরণের অনুন্নত অবকাঠামো মেনে নেওয়ার মতো নয়। সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জোয়ার বয়ে গেলেও বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া উপকূলীয় এলাকার লোকজনের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি। স্বাভাবিকভাবে লোকজন ও যানচলাচলেরর উপযোগী করার জন্য বেইলি সেতুটি দ্রুত মেরামতে কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করি।’
উল্লেখ্য, আরবশাহ্ বাজারের উত্তরে অবস্থিত পুঁইছড়ি-ছনুয়া স্টিল ব্রীজটি ২০০৬ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে নির্মাণ করা হয়। লবণ বোঝাই ট্রলি চলাচলের কারণে ব্রীজটির পাটাতন নষ্ট হয়ে গেলে ২০১৭ সালে বাঁশখালী উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ব্রীজটি সংস্কার করা হয়। কয়েক বছর যেতে না যেতেই লবণাক্ততার কারণে আবারও মরীচিকা ধরে যায় পাটাটনে।
এই সেতুটি ছনুয়া ও পুঁইছড়ি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র পথ। তাছাড়া সেতুটি রাজাখালী ফৈজুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়, রাজাখালী বিইউআই ফাজিল মাদরাসা, ছনুয়া কাদেরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, রাজাখালী আরবশাহ্ বাজার, ছনুয়া মনুমিয়াজী বাজার যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম।
এ বিষয়ে বাঁশখালী উপজেলা প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, ‘ঐ সেতুটি শিগগিরই হয়ে যাবে বলে আশা করি। ইতিমধ্যে সংস্কারে প্রস্তাবিত টাকার প্রাক্কলন ঠিক আছে কিনা, নাকি আরও বেশি লাগবে সেটা দেখার জন্য ঢাকা থেকে এলজিইডির টিম আসবে। তাদের ২-৩ দিনের মধ্যে ভিজিট করতে আসার কথা। উনারা সেতুটি পরিদর্শনের পর অনুমোদন দিয়ে দেবেন। আশা করছি এটা শিগগিরই হয়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্রীজটি লবণ বোঝাই ট্রলি চলাচলের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।’ লবণ বহন করার সময় লবণের নিচে পলিথিন ব্যবহার করলে আর ক্ষতিগ্রস্থ হতো না বলে জানান তিনি।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ