গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুরে ফিরে একই জেলায় ১৬ বছর ধরে কর্মরত আছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে প্রভাবের কারণে ঠিকাদাররা তাঁর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। অথচ চাকরিবিধি অনুযায়ী, একজন সরকারি কর্মকর্তা একই কর্মস্থলে টানা তিন বছরের বেশি থাকার কথা নয়।
গাইবান্ধা এলজিইডি, সাঘাটা উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, মো. ছাবিউল ইসলামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়। অবশ্য বর্তমানে তিনি রাজশাহী নগরে বিশাল বাড়ি করেছেন। তিনি ২০০৫ সালের ২১ ডিসেম্বর উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে সাঘাটায় যোগদান করেন। এখানে কর্মরত থাকেন ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করেন টানা ১৪ বছর ১ মাস ২২ দিন।
এরপর জ্যেষ্ঠ সহকারি প্রকৌশলী হিসেবে এলজিইডি গাইবান্ধা জেলা কার্যালয়ে যোগ দেন। এখানে তিনি ১ বছর ৬ মাস ২৮ দিন দায়িত্ব পালন করেন। একই সালের (২০২০ সাল) ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এসময় তিনি সাঘাটা উপজেলায় (উপজেলা প্রকৌশলী) অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। ছাবিউল ইসলাম নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর বরিশাল জেলায় যোগ দেন। সেখানে মাত্র ২৩ দিন দায়িত্ব পালন করেন।
তদবির করে গত ৬ অক্টোবর গাইবান্ধায় বদলি নেন। পরদিন ৭ অক্টোবর তিনি গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। গত ৮ নভেম্বর তিনি পূর্ববর্তী নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন। অর্থাৎ সাঘাটায় যোগদানের পর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত ঘুরে ফিরে প্রায় ১৬ বছর (১৫ বছর ১০ মাস ২১ দিন) ধরে গাইবান্ধা জেলায় আছেন।
অথচ সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, একজন সরকারি কর্মকর্তা একই কর্মস্থলে টানা তিন বছরের বেশি থাকার কথা নয়। কিন্তু এই বিধি উপেক্ষা করে টানা প্রায় ১৬ বছর ধরে এক জেলাতেই ঘুরে ফিরে দায়িত্ব পালন করছেন প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম। চাকরিবিধি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন বলেন, ‘একজন সরকারি কর্মকর্তা এক কর্মস্থলে তিনবছর থাকলে তাকে বদলি করতে হয়।’
ছাবিউলের বিষয়টি অবগত করলে গাইবান্ধা সনাকের (টিআইবি পরিচালিত) সদস্য সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, ‘এমনিতেই এক উপজেলায় দীর্ঘসময় থাকা বিধি সম্মত হয়নি। তিনি সরকারি বিধি লংঘন করেছেন। উপরন্ত এলজিইডির জেলা কার্যালয়ে বদলি নিয়েছেন। ফলে এক জেলায় ঘুরে ফিরে এতোদিন থাকা নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাঘাটা উপজেলার এক ঠিকাদার বলেন, ‘সাঘাটায় দীর্ঘদিন থাকার কারণে ওই প্রকৌশলী নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছিলেন। বিশেষত তাঁর প্রভাবের কারণে ঠিকাদাররা তাঁর কাছে জিম্মি ছিলেন। এখন এলজিইডির জেলা কার্যালয় থেকেও প্রভাব খাটানোর আশঙ্কা রয়েছে।’
গাইবান্ধা নাগরিক মঞ্চের সদস্য সচিব ও জেলা আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘যে কর্মকর্তা দীর্ঘ সময় ঘুরে ফিরে একই জায়গায় থাকেন, তাঁর মধ্যে অসৎ উদ্দেশ্য থাকে।’ এ প্রসঙ্গে গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম তদবির করে একই জেলায় ১৬ বছর থাকা ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘তাঁর উন্নয়ন কাজে সন্তষ্ট ছিলেন স্থানীয় সাংসদ (গাইবান্ধা-৫, সাঘাটা-ফুলছড়ি আসন) ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া। তিনিই এলজিইডির উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করে দীর্ঘদিন তাকে সাঘাটায় রেখেছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে গাইবান্ধায় বদলির বিষয়েও তিনি কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করতে পারেন, সেটা তিনি জানেন না।’
এবিষয়ে ডেপুটি স্পিকারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু চিকিৎসার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করায় তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ