ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

হত্যার প্রতিশোধ নিতে হত্যা, প্রধান আসামী গ্রেফতার

প্রকাশনার সময়: ০৪ নভেম্বর ২০২১, ১৭:৩৪ | আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২১, ১৭:৪৭

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের চৈত্রঘাট বাজারের ব্যবসায়ী নেতা নাজমুল হাসান (৩৬) কে কুপিয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামীকে বিদেশ যাওয়ার পথে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) দুুপুরে মৌলভীবাজার এসপি অফিসের সম্মেলন কক্ষে এই তথ্য নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া। তিনি বলেন, ‘মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবিএম মুজাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে মৌলভীবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের চৌকস দল ৪ নভেম্বর ভোর রাতে ঢাকার কমলাপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এসময় কমলগঞ্জের চৈত্রঘাট বাজারের ব্যবসায়ী নাজমুল হাসানকে হত্যা মামলার প্রধান আসামী তফাজ্জুল আলী (৩৫) ও তার সহযোগী খালেদ মিয়া (৫৩) কে গ্রেফতার করে। এসময় তাদের কাছ থেকে ১টি পাসপোর্ট, এয়ার টিকেট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মোবাইল, সিমকার্ড, দিরহাম ও টাকা উদ্ধার করে।’

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তফাজ্জুল আলী ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলেন জানান এসপি। তিনি বলেন, ‘গত ২ জুন নিহত নাজমুল পূর্বে গ্রেফতার হওয়া আসামী জুয়েলের উপর হামলা করে পঙ্গু করে দেয়। ঐ ঘটনায় কমলগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এই ঘটনার পর নিহত নাজমুলের উপর প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ২ থেকে ৩ মাস যাবত নিহতের উপর নজরদারি চালায় তারা। ভিকটিম বিষয়টি বুঝতে পেরে কমলগঞ্জ বাজারে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। প্রয়োজন ছাড়া বাজারের বাহিরে যেতেন না।’

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘আসামীরা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ১০ থেকে ১৫ দিন আগে দৈনিক ভিক্টিমকে দলবদ্ধভাবে নজরদারী করতে থাকে। তারা হামলার কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য দৈনিক চুক্তিতে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে। ঘটনার দিন ৩১ অক্টোবর চৈত্রঘাট কালি মন্দিরের সামনে আসামীদের গাড়িটি অপেক্ষারত ছিল। ঐদিন বাজার কিছুটা জনশূন্য এবং ভিক্টিম নাজমুল একা থাকার সুযোগে তফাজ্জুলের নেতৃত্বে হামলা করে আসমীরা দ্রুত পালিয়ে যায়। তফাজ্জুল জানায়, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বিদেশে পলায়নের জন্য আগে থেকেই টিকেট কাটা ছিল।’

মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, মূলত বাজারে অধিপত্য বিস্তার নিয়ে নাজমুল ও তফাজ্জুলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দন্ধ ছিল। এর আগেও তাদের মধ্যে অনেক মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বাজারে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়। কিন্তু তারপরও একটি হত্যার ঘটনা ঘটে যায়। এই ঘটনাটির সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে সারাদেশে আলোড়ন তৈরি হয়। জেলা পুলিশ এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে আইগত ব্যবস্থা নিবে।

এ দিকে সোমবার (১ নভেম্বর) হত্যাকাণ্ডে ভাড়ায় আনা মাইক্রোবাস জব্দ করে চালক আমির হোসেনকে গ্রেফতার করেছিল কমলগঞ্জ থানার পুলিশ। সোমবার রাতে রাজনগর থেকে জুয়েল মিয়া নামে তালিকাভুক্ত এক আসামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ব্যবসায়ী নাজমুল সড়কের ধার দিয়ে হেটে তার বাসার দিকে যাওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে একটি মাইক্রোবাস থেকে নেমে হামলাকারীরা তাকে ধাওয়া করে। তিনি সড়কে পরে গেলে চার জনের অধিক ব্যক্তি দা দিয়ে ব্যবসায়ীর পায়ে কোপাতে থাকে। এসময় ভাড়ায় আসা মাইক্রোবাস দ্রুত মৌলভীবাজারের দিকে চলে যায়। চারজন বয়বসায়ীর পায়ে কুপানোর সময় একজন আবার ব্যবসায়ীর মাথায় ও দেহে লাথি মারতে তাকে। কোপানোর সময় বেশ কয়েক ব্যক্তি এগিয়ে এলে তাকে কেউ সাহায্য করেননি। নাজমুল অবচেতন হয়ে পড়ে রইলে, হামলাকারীরা ধীরেধীরে পূর্ব দিকে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ওপর দিয়ে নিরাপদে চলে যায়।

পুলিশ আরও জানায়, ধলাই নদীর বালু ঘাট নিয়ে দুই পক্ষের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত দেড় মাসে এই দুই পক্ষের মাঝে তিনবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। কমলগঞ্জ থানায়ও মামলা হয়েছে। তাছাড়া ব্যবসায়ী নাজমুল হামলাকারী ৪ জনের নাম প্রকাশকালে ভিডিও লাইভে বলেছিলেন আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি রহিমপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী ছিলেন। তার প্রতিদ্বন্ধী ছিলেন তফাজ্জুল। এনিয়ে তার সাথে বিরোধের জের ছিল দীর্ঘদিনের।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ