নরসিংদীর দুর্গম চরাঞ্চল আলোকবালীতে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৩ জন নিহত হয়েছেন। নির্বাচনে ইউপি মেম্বার প্রার্থী আবু খায়ের গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) সকালে সদর উপজেলার মেঘনা নদী বেষ্টিত দুর্গম চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়নের নেকজানপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত ১০ জনকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাহের নামে ১ জনকে হাসপাতাল থেকে আটক করেছে পুলিশ।
তবে হামলা-সংঘর্ষ ও হতাহতের জন্য পুলিশকে দায়ী করেছেন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মামুন হাসান। তিনি অভিযোগ করেন, হামালা হতে পরে এই বিষয়টি পুলিশকে জানালেও পুলিশ পূর্ব থেকে কোন রকম প্রস্তুতি নেয়নি। এমনকি গত রাতে থানায় বসে অভিযোগ দিয়েছি। কোন লাভ হয়নি। যার ফলে এতগুলো লোক মারা গেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নরসিংদী পুলিশ।
নিহতরা হলেন, নেকজানপুর গ্রামের কটুমিয়ার ছেলে আমির হোসেন (৪৫), একই গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে আশ্রাফুল (২২), আব্দুল মনু মিয়ার মেয়ে খুশি বেগম (৫০)। এরা সবাই আলোকবালী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দীপু সমর্থক।
পুলিশ ও স্থানিয়রা জানিয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলোকবালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দীপু সমর্থক ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ’র সাথে দন্ধ চলছিল। দন্ধের জেরেই গত ১০ দিন আগে এই দুই পক্ষের মধ্যে সংষর্ষ হয়।
সর্বশেষ আলোকবালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পায় বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দীপু। নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড. আসাদুল্লাহ আসাদ। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আসাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেয়। পরে দলীয় নেতাকর্মীদের চাপে সে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়। এনিয়ে এড.আসাদুল্লাহ সমর্থক মেম্বার প্রার্থী রিপন মোল্লা ও দীপু সমর্থক মেম্বার প্রার্থী আবু খায়ের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
এরই জেরে বৃহস্পতিবার সকালে আসাদুল্লাহ’র সমর্থক রিপন মোল্লার সমর্থকরা টেঁটা বল্লম ও অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে নেকজানপুর গ্রামে দীপু চেয়ারম্যানের সমর্থক আবু খায়ের সমর্থকদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। পরে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। এসময় প্রতিপক্ষের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ৩জন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ১০ জনসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ সকলকেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
আলোকবালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলায়ার হোসেন দীপু জানান, নির্বাচনে আসাদউল্লাহ ভাই আমকে সর্মথন জানিয়ে মনোনয়ন তুলে নিয়েছিল। ভেবেছিলাম তারা আমার সাথে মিলে গেছে। কিন্তু না। তারা আমাকে মেনে নিতে পারছেন না। তাই নানা অজুহাতে আসাদউল্লাহ ভাই ও তার সমর্থকরা আমার সমর্থকদের উপর হামলা চালায় এবং ৪ জন লোককে গুলি করে হত্যা করে। আমি এর বিচার চাই।
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অপর পক্ষ আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড. আসাদউল্লাহ। তিনি জানান, এই ঝগড়ায় আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। আমি দীপুকে সমর্থন জানিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছি। গ্রামে ঝড়গা যেন না হয় তার জন্য উর্ধ্বতন নেতাকর্মীসহ পুলিশের সাথে বসেছি। তাদের সহযোগীতাও চেয়েছি। কিন্তু দুই মেম্বার সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে ৩ জন মারা যায়। এর মধ্যে আমির হোসেন নামে আমার এক আত্বিয়ও মারা গেছে।
পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে নরসিংদী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান জানান, খবর পেয়ে দ্রতসময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পূর্ব বিরোধের জেড় ধরে এই সংর্ঘষ। এতে তিনজন নিহত হয়। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ