৪০ বছর আগে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলা থেকে হারিয়ে যান ৯-১০ বছর বয়সী মো. আলম (৫১)। এরপর আর নিজের মা-বাবাকে দেখেননি। সেই আলমকে নিয়ে গত ২১ অক্টোবর নয়া শতাব্দীর অনলাইন সংস্করণে ‘বাবা-মাকে খুঁজে ফিরছেন হারিয়ে যাওয়া আলম’ ও ২৭ অক্টোবর নয়া শতাব্দীর ৮ নাম্বার পৃষ্ঠায় ‘৪০ বছর ধরে বাবা-মাকে খুঁজছেন আলম’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
আলমকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মোছাঃ শামসুন নাহার সংবাদটি পড়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। তিনি ভালুকায় যোগাযোগ করে আলম ও তার পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নেন। কারণ ওই নারী কাউন্সিলরের তিন বোনকে নরসিংদী সদর উপজেলার কাঁঠালিয়া ইউনিয়নের থামারদী গ্রামে বিয়ে দিয়েছেন। তার এক বোনের বাড়ির কাছেই হারিয়ে যাওয়া আলমের বাবা আসকর আলীর বাড়ি।
তখন তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেন সংবাদে প্রকাশিত আলমের আপন ও চাচাতো ভাইদের নামগুলো মিলে যায়। তিনি জানান, আলমের মা জাহানারা বেগম জীবিত থাকলেও প্রায় ২০ বছর আগে তার বাবা আসকর আলী মারা গেছেন।
ছোটবেলায় আলমের নাম ছিল নূরুল হক। পরে বিষয়টি আরও বেশী যাচাই করার জন্য নরসিংদী সদর উপজেলার কাঁঠালিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড সদস্য নাসির মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে উনিও সত্যতা খুঁজে পান।
৪০ বছর পর মা তার হারানো সন্তানকে বুকে টেনে নেন। পরিবারের সকলের চোখের অশ্রু তবে তা বিষাদের নয় আনন্দের অশ্রু। হারানো স্বজনদের ফিরে পাওয়ার অশ্রু। এলাকার সকল গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ উপস্থিত থেকে সেই মিলন মেলা উপভোগ করেন। এ সময় আলমের মা জানান, আমার হারানো মানিক আমার বুকে ফিরে এসেছে আমি খুশী হয়েছি। আমি কতটুকু খুশী হয়েছি তা মুখের ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। যাদের মাধ্যমে আমার ছেলেকে ফিরে পেলাম তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি।
তার সহোদর ভাই শামছুল হক বলেন, আমি মিডিয়ার মাধ্যমে আমার ভাইকে ফিরে পাওয়ায় মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তার চাচাতো ভাই মারফত আলী বলেন, ‘ছোটবেলায় লোকমান নামে আমাদের এক জেঠাত ভাই হারিয়ে গেলে নূরুল হক তাকে খুঁজতে যায়। ৮/১০দিন পর লোকমান ফিরে এলেও নূরুল হক আর ফিরে আসেনি। সে হারিয়ে যাওয়ার পর সবাই মিলে কতো খোঁজাখুঁজি করলাম কোথাও পাইনি। আমার জেঠা নুরুল হকের বাবা নিজের জমি বিক্রি করে ছেলে খোঁজাখুঁজি করে সম্পদও নষ্ট করে ফেলেছে, তাও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। আজ মিডিয়ার মাধ্যমে তাকে আমরা কাছে পেয়ে অনেক খুশি, আনন্দে বুকটা ভরে গেছে।’ এলাকাবাসী জানান, আলমের বাবা এলাকায় বেশ জনপ্রিয় ও তাদের গোষ্ঠি এলাকায় বেশ প্রতাপশালী ছিল। আলমকে খুঁজতে গিয়ে তার বাবা অনেক সম্পদ নষ্ট করেছেন। কিন্তু জীবনদশায় ছেলেকে দেখে যেতে পারেননি।
আলমের জন্ম ঠিকানা ফিরে পাওয়ায় এক সময় তাকে ভালুকায় আশ্রয়দাতা হাজী শহিদুল ইসলাম বলেন, আলম তার আপন ঠিকানা ফিরে পাওয়ায় আমি খুব খুশী হয়েছি।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ