মেহেরপুর জেলা সদরের পুলিশ লাইনের পাশে বসন্তপুর খড়ের মাঠে ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার’ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
সোমবার (১ নভেম্বর) বেলা ১১ টার দিকে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইনকিউবেশন সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার’ মেহেরপুরবাসীর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এক অনন্য উপহার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ এর ব্রেইন চাইল্ড এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে একদিকে যেমন বেকারত্ব দূর হবে, একই সাথে তথ্যপ্রযুক্তিতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এক রকম উল্লম্ফন সৃষ্টি হবে। আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার থেকে বের হয়ে তরুণ উদ্যোক্তারা আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে যেন ব্যাপক পরিসরে কাজ করতে পারেন সে লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাই-টেক পার্কও স্থাপন করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রতিযোগিতা মোকাবেলায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইওটি, রোবোটিক্স, সাইবার সিকিউরিটিসহ উচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর এবং স্পেশালাইজড ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে।’
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন,
‘প্রতিযোগিতার এই যুগে আমাদের তরুণদের টিকে থাকতে হলে প্রযুক্তি শিক্ষার বিকল্প নেই। সরকার এ জন্যই একটি প্রযুক্তি নির্ভর জাতি গড়ে তুলতে কাজ করে চলেছে। এখন সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন। আমরা দৈনন্দিন অনেক কাজই এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে করতে পারছি। আমাদের রপ্তানি খাতেও ডিজিটাল ডিভাইস অবদান রাখতে পারে। ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার’ থেকে ট্রেনিং নিয়ে এখানকার তরুণ-তরুণীরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে; অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এখন থেকে আর চাকুরির পেছনে ছুটতে হবে না, নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে মানুষকে চাকুরি দিবে।তিনি আরও বলেন, ‘অবহেলিত মেহেরপুরে এতদিন যে গতানুগতিক ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হয়ে এসেছে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের আইটিতে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করে আইটি ইন্ডাস্ট্রিতেও এখন মেহেরপুরবাসীর অবদান রাখার ক্ষেত্র প্রস্তুত হলো। এই আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের মাধ্যমে আইটি/আইটিইএস খাতে মেহেরপুরের যুব সমাজের আত্ম-কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের ৬৪টি জেলায় আইটি খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করছে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে মেহেরপুর শহরের উপকন্ঠ বসন্তপুর খড়ের মাঠে আজ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলো। মেহেরপুর ছাড়াও এই প্রকল্পের আওতায় আরো ১০টি জেলায় (মানিকগঞ্জ, ভোলা, সিরাজগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, কুষ্টিয়া, জয়পুরহাট, নারায়ণগঞ্জ, বান্দরবান, দিনাজপুর ও চাঁদপুর) শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এবং বাংলাদেশ সেনাবহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ১১টি জেলায় প্রায় ৭৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।’
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জে. ওয়াকার-উজ্-জামান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতেই আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি এবং জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপি গাছের চারা রোপন করেন। এদিন বেলা ১০টার দিকে হেলিকপ্টার যোগে প্রতিমন্ত্রীদ্বয় সহ অতিথিবৃন্দ মুজিবনগর কমপ্লেক্সে পৌঁছান এবং সেখানে স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। পরে সড়ক পথে তারা মেহেরপুর সদর উপজেলার বসন্তপুর খড়ের মাঠে পৌঁছান।
বাংলাদেশ ডিজেল প্ল্যান্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী অনিরুদ্ধ, মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান, পুলিশ সুপার রাফিউল আলমসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, সাংবাদিক, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে স্থানীয় ৫ জন প্রতিবন্দী ও ৫ জন ফ্রিল্যান্সারের মাঝে বিনামূল্যে ১০ টি ল্যাপটপ বিতরণ করা হয়।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ