তবে কি এই পৃথিবীর রং রূপ অন্ধকারই থেকে যাবে ৫ বছরের শিশু আল আমিনের কাছে? জন্মই কি তার আজন্ম পাপ হয়ে রবে? পিতা-মাতার দারিদ্রের কষাঘাতের কাছে কি হেরে যাবে তার পৃথিবীর আলো দেখার স্বপ্ন? কেউ কি নেই তার এ স্বপ্ন পূরণ করতে এগিয়ে আসার মত?
মাগুরা শহরের দরি মাগুরা কারিকর পাড়া এলাকার দিনমজুর হেলাল হোসেন ও হাসিনা বেগমের সংসারের একমাত্র সন্তান আল আমিন (৫)। আর পাঁচটা শিশু যখন শিশু সুলভ হাসি-আনন্দে বিভোর, বন্ধুদের সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার আলোকজ্জ্বল স্বপ্ন দেখছে। আল-আমিন তখন অন্ধত্ব নিয়ে অন্ধকারকে সঙ্গী করে বেড়ে উঠছে। সেই সঙ্গে বাবা মায়ের জন্য বয়ে এনেছে একরাশ হতাশা। এখন তাদের একটিই প্রশ্ন অর্থের অভাবে কি আমাদের একমাত্র সন্তানটি পৃথিবীর আলো দেখা থেকে বঞ্চিত হবে?
আল-আমিনের বাবা দিনমজুর হেলাল হোসেন জানান, ‘ছোটবেলা বাবা-মাকে হারিয়ে ভবঘুরে জীবন কাটিয়েছি। এক সময় মাগুরা শহরের দরি মাগুরা এলাকার আর এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হাসিনা বেগমকে বিয়ে করে সুখের আশায় ঘর বাধি। দীর্ঘ আট বছর সংসার করার পর ২০১৬ সালে আমাদের সংসারে জন্ম হয় আল আমিনের। কিন্তু ফুলের মত ফুটফুটে সন্তানের এ জন্মের আনন্দ আমাদের স্থায়ী হলো না। জন্মের পর ডাক্তাররা বলেন তার চোখের মনির উপর পুরু একটি সাদা স্তর। চিকিৎসকরা জানালেন এ কারণেই শিশুটি জন্মান্ধ। যদিও তারা আশা প্রকাশ করেন পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসা দিতে পারলে শিশুটি হয়তো তার চোখের জ্যোতি ফিরে পেতে পারে।’
‘আনন্দের স্থলে একরাশ দুঃখ নিয়ে শিশু সন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। পরে মাগুরার চক্ষু চিকিৎসক ও তাদের পরামর্শে ঢাকায় চক্ষু চিকিৎসকদের দেখালে তারা অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে আরও উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে তার শিশুটির চোখের জ্যোতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে জানিয়েছে তারা। তবে আল আমিন চোখে আলোর অস্তিত্ব টের পায়। ঘরে বিদ্যুৎ চলে গেলে সে বুঝতে পারে অন্ধকার হয়ে গেছে। আমার বিশ্বাস ভাল চিকিৎসা করাতে পারলে ও চোখে দেখতে পারতো। কিন্তু দিন আনা দিন খাওয়া অভাবের সংসারে আল আমিনকে নিয়ে ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন অবস্থান করা তাদের জন্য অসম্ভব।’
‘এজন্য কমপক্ষে ২লাখ টাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু রাজমিস্ত্রির জোগালে কাজ করে আমার যেখানে সংসার পরিচালনা করা কষ্টের, সেখানে ২ লাখ টাকা জোগাড় করা একেবারেই অসম্ভব। এ অবস্থায় সমাজের হৃদয়বান মানুষেরা এগিয়ে এলে আমি হয়তো বাচ্চাটির চোখের জ্যোতি ফিরিয়ে আনতে পারবো।’ বলেন শিশুটির বাবা।
ওই শিশুর মা হাসিনা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, ‘আমার একমাত্র ছেলেটা কি সুন্দর করে হাসে! ওর হাসি দেখলে মনে হয় নিজের কলিজা বিক্রি করে যদি ওর চিকিৎসা করতে পারতাম। ওর চোখে আলো আনতে তাই করতাম। জীবনে তো কারও কোন ক্ষতি করিনি, তাহলে আল্লাহ আমাদের কেন আমাদের এত কষ্ট দিলেন জানিনা। ছেলেটির যদি চিকিৎসার জন্য কেউ এগিয়ে আসতো তবে আজন্ম তার গোলাম হয়ে থাকতাম।’
মাগুরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আব্দুল্লাহ-আল-কাফি জানান শিশুটি জন্মগতভাবে অন্ধত্বের শিকার। এর উন্নত চিকিৎসা ব্যয়বহুল। তবে সে যেহেতু আলো দেখতে পায়। উন্নত চিকিৎসা করলে শিশুটি তার চোখের জ্যোতি ফিরে পেতে পারে।
মাত্র ৫ বছর বয়সের শিশু আল আমিনের চোখের জ্যোতি ফিরিয়ে আনতে যে টাকা প্রয়োজন তা জোগাড় করতে সমাজের বিত্তবান ও সহৃদয় মানুষের সহায়তা চেয়েছে তার পরিবার। আল আমিনকে সহায়তা পাঠাতে চাইলে শিশুটির মা হাসিনা বেগম এর ০১৭৯৪২১৫০৩২ নম্বরে বিকাশ ও নগদ অথবা অগ্রণী ব্যাংক, মাগুরা ভায়নার মোড় শাখায় একাউন্ট নম্বর ০২০০০১৭৫৫৩০৫৪ এ সহায়তা পাঠাতে পারেন। আপনার আমার সামান্য সহায়তায় সমাজের আর পাঁচজন শিশুর মত শিশু আল আমিনের জীবন হয়ে উঠতে পারে আলোকজ্জ্বল ও স্বার্থক।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ