জামালপুর সদর উপজেলার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে এ্যানেসথেশিয়ার সঙ্কটে বন্ধ রয়েছে সিজারিয়ান অপারেশন। সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন জামালপুরবাসী।
সরেজমিনে জামালপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে জানা যায়, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে প্রসূতি মায়েদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হয়ে থাকে। মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে স্বাভাবিকভাবে যে সকল প্রসূতি মা সন্তান প্রসব করেন তাদের সেবা দেয়ার পাশাপাশি সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমেও সন্তান প্রসব করানো হয়ে থাকে। বর্তমানে এ কেন্দ্রে প্রসূতি মায়েদের স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা থাকলেও একজন এ্যানেসথেশিয়ার অভাবে সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে গর্ভবতী মা এবং তাদের আত্মীয় স্বজনরা।
জানা যায়, চলতি বছরের মার্চ মাসে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের এ্যানেসথেশিয়ার চাকরীর বয়সসীমা শেষ হয়েছে। তিনি অবসরে যাওয়ার পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও নতুন আর কোন এ্যানেসথেশিয়া ডাক্তারের ব্যবস্থা হয়নি এই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে। পরে প্রসূতি মায়েদের দুর্ভোগের কথা ভেবে জামালপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. সাজদা-ই-জান্নাত তনু অবসরে যাওয়া এ্যানেসথেশিয়া ডা.সোহ্রাব আলীকে দিয়ে কেন্দ্রটিতে সিজারিয়ান অপারেশন চালু রাখেন। সে সময় মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সিজারিয়ান অপারেশন চালু হলেও এ্যানেসথেশিয়া ডা.সোহ্রাব আলীর অসুস্থতার কারণে। গত জুন মাস থেকে সিজারিয়ান অপারেশন পরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রসূতি মায়েরা স্বাস্থ্য সেবা নিতে এ কেন্দ্রে ছুটে আসেন। মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে প্রসূতি মায়েদের বিনা খরচে সব ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষাসহ সিজারিয়ান অপারেশন করে থাকেন কেন্দ্রটি। একজন এ্যানেসথেশিয়ার অভাবে গত জুন মাস থেকে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন প্রসূতি মা ও তাদের অভিভাবকরা।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, জামালপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি করোনার সময়েও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ১১৫টি সফল সিজারিয়ান অপারেশন সম্পন্ন করেছেন। একজন এ্যানেসথেশিয়ার অভাবে চরম বিপাকে পড়েছে গর্ভবতী মা ও তাদের আত্মীয় স্বজনরা। মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে একজন এ্যানেসথেশিয়ার এখন সময়ের দাবী।
পৌর শহরের বসাকপাড়া এলাকার সম্পদ দাশ জানান, আমার ইচ্ছা ছিলো অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে পরিচ্ছন্ন জামালপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সিজারিয়ান অপারেশন করাবো। কিন্তু জানতে পারলাম এখানে এ্যানেসথেশিয়া ডাক্তারের অভাবে সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ রয়েছে। তাই এখানে সম্ভব না হওয়ায় বাধ্য হয়ে শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে স্ত্রীর সিজারিয়ান অপারেশন করিয়েছি। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে বলেও জানান তিনি।
পৌর শহরের বোষপাড়া এলাকার লিমা আক্তার জানান, আমি সন্তান সম্ভাবা। মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ডাক্তার, চিকিৎসা সেবাসহ সার্বিক পরিস্থিতি দেখে ভালই মনে হলো। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে যদি বাচ্চা না হয়, তাহলে তো সিজার করতে হবে। কিন্তু শুনলাম এখানে সিজারের ব্যবস্থা নেই। স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা না হলে তো পরে আবার বিপদে পড়তে হবে।
আরো জানা যায়, ডা. নওয়াজেশ জোহাদ ২০২০সালে জামালপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে প্রেষণে যোগদান করলেও বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করছেন।
জামালপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক) ডা.উম্মে হাবিবা বলেন, এখানে যোগদানের পর থেকেই গর্ভবতী মায়েদের স্বাভাবিক প্রসবের পাশাপাশি অসংখ্য সিজারিয়ান অপারেশন করেছি। বর্তমানে একজন এ্যানেসথেশিয়ার অভাবে সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ রয়েছ। তিনি আরও বলেন, সিজারের জন্য আসা অসুস্থ কোন প্রসূতি মাকে ফিরিয়ে দিতে আমার খুব কষ্ট হয়। আশা করি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সঙ্কট দূর হবে।
সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ থাকার বিষয়ে জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. সাজদা-ই-জান্নাত তনু সাংবাদিকদের বলেন, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটিতে একজন এ্যানেসথেশিয়া পদায়নের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এর ব্যবস্থা হবে বলে জানান তিনি।
নয়া শতব্দী/টিএফ/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ