“৪০ বছর ঘানি টানছেন দম্পতি” শিরোনামে গত ১৩ অক্টোবর দৈনিক নয়া শতাব্দী পত্রিকায় নিউজ প্রকাশ হওয়ার পর ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের গুয়াবাড়ি কিসামত এলাকার খর্গ মোহন সেনের বাসায় জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান নিজে উপস্থিত হয়ে গরুটি তুলে দেন। এর সাথে সরিষা ক্রয় এর জন্য ১২ হাজার টাকা নগদ দেওয়া হয় খর্গ মোহনকে।
দরিদ্র খর্গ মোহন সেন ও তার স্ত্রী গরুর অভাবে নিজেরাই ঘাড়ে জোয়াল নিয়ে ঘানি টেনে সরিষার তেল উৎপাদন করেন এমন সংবাদ নয়া শতাব্দী পত্রিকায় প্রকাশের পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) গরু দেওয়া হল সেই দম্পতিকে।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাম কৃষ্ণ বর্মন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান, গড়েয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজওয়ানুল ইসলাম শাহ রেদো, গড়েয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আফিজার রহমান দুলাল, সাধারণ সম্পাদক রইচ উদ্দিন সাজু প্রমুখ।
গরু নেওয়ার সময় আবেগে আপ্লুত হয়ে খর্গ মোহন বলেন, একটি গরুর অভাবে আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে কষ্ট করে গরুর বদলে নিজেরা ঘানি টেনে তেল তৈরি করতাম। সাংবাদিকরা নিউজ করার পরে ডিসি স্যার এলা হামাক গরু দিছে। বাকি জীবনটা এলা মুই ভালো ভাবে চলিবা পারিম।জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, নয়া শতাব্দী পত্রিকায় নিউজটি দেখতে পেয়ে আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে খবর নেই। পরে জানতে পারি এই সরিষার তেল এর চাহিদা অনেক এবং এই দম্পতি কষ্ট করে তেল তৈরি করে। তাই পরে সিদ্ধান্ত নিয়ে ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে তাদের একটি গরু কিনে দেওয়া হয়। ভালো কাজের পাশে জেলা প্রশাসন সবসময় থাকবে।
উল্লেখ্য, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের গুয়াবাড়ি কিসামত এলাকার খর্গ মোহন সেন ও তার সহধর্মিণী রিনা রানী সেন। তাদের তিন ছেলে ও এক কন্যাসন্তান রয়েছে। ভিটাবাড়িটুকুই সম্বল। মানুষকে নির্ভেজাল তেল খাওয়াবেন বলে বংশ পরম্পরায় এ পেশা তারা এখনো ছাড়ছেন না।
খর্গ মোহন সেন বয়স প্রায় ৬০ বছর, তার স্ত্রী রিনা রানী সেন বয়স ৫৫ বছর। একসময় তারা ঘানি ভাঙা ৬ থেকে ৭ কেজি তেল উৎপাদন করতে পারতেন। বয়সের কারণে আগের মতো শরীরের শক্তি নেই। হতদরিদ্র স্বামী-স্ত্রী এখন মাঝেমধ্যে নিজেরাই ঘাড়ে জোয়াল নিয়ে ঘানি টানেন। ১ থেকে ২ কেজি তেল উৎপাদন করতে পারলে বাজারে নিয়ে বিক্রি করে কোনোরকমে সংসার চালান।
নয়া শতাব্দীতে প্রকাশিত নিউজের লিংক :
৪০ বছর ধরে ঘানি টেনে চলছে দম্পতির জীবন!
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ