টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে স্কুল ছাত্রী সুমাইয়া হত্যা রহস্য উন্মোচন করেছে র্যাব-১২ এর সদস্যরা। মাত্র ১০ ঘণ্টার মধ্যে বুধবার রাতে এ হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন প্রধান আসামি নিহত সুমাইয়ার সাবেক প্রেমিক মনিরকে (১৭) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১২। সুমাইয়ার গলাকাটা লাশের পাশে গুরুতর আহতাবস্থায় পড়ে থাকা মনিরই সুমাইয়াকে খুন করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। গ্রেফতারকৃত মনির কালিহাতী উপজেলার চরভাবলা গ্রামের মেহের আলীর ছেলে।
র্যাব-১২, সিপিসি-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার লে.কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ঘটনার পর থেকেই র্যাবের গোয়েন্দা টিম তদন্ত করে জানতে পারে মনির নামে এক বখাটে ছেলের সাথে সুমাইয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই তথ্যের সূত্র ধরে ছেলেটির পরিচয় বের করে এবং হত্যার সাথে কোন সংশ্লিষ্টতা আছে কি না অনুসন্ধান করতে থাকে। মনিরের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের জিজ্ঞাসাবাদে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হতে থাকে হত্যাকাণ্ডের রহস্য। মনিরের বন্ধুর মোবাইলের ছবি ও ভিডিও এর সূত্রধরে বিভিন্ন বিষয়ের তথ্যের সন্নিবেশ ঘটিয়ে হত্যা রহস্য উদঘাটন করা হয়।
তথ্যে জানা যায়, নিহত সুমাইয়ার সাথে ট্রাকের হেলপার মনিরের দীর্ঘ ২ বছর যাবত প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মনির অত্যন্ত বদমেজাজি এবং নেশাগ্রস্ত। সে সুমাইয়ার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য বিভিন্ন সময় চাপ দিত এবং শারীরিক নির্যাতন করত। ধীরে ধীরে সুমাইয়া তার সাথে সম্পর্ক ছেদ করে দুইমাস আগে অন্য একটা ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এতে মনির ক্ষুব্ধ হয়। সপ্তাখানেক আগে মনির সুমাইয়াকে রাস্তায় একা পেয়ে মারপিট করে। এতে তার কান দিয়ে রক্ত চলে আসে এবং চিকিৎসা করাতে হয়। এই চড় থাপ্পড় মারার দৃশ্য মনির ভিডিও করে রেখে বন্ধুদের দেখায়। গত মঙ্গলবার রাত ১০ টায় মনির তার ঘনিষ্ঠ ৫/৬ জন বন্ধুদের নিয়ে এলেঙ্গা সামসুল হক কলেজে মিটিং করে এবং সুমাইয়া ও তার নতুন প্রেমিকের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে। মনির পাগলের মত আচরণ করতে থাকে এবং প্রায় ৩০ মিনিট পর সবাই যার যার বাড়ি চলে যায়।
ভিডিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, ট্রাক হেলপার মনির একটি সুইচ গিয়ার সংগ্রহ করে এবং লাইকির জন্য ভিডিও তৈরি করে। বিভিন্ন স্টাইলে মনির ওই সুইচ গিয়ার চাকুর ব্যবহার করার ভিডিও করে। যা র্যাব-১২ টাঙ্গাইলের গোয়েন্দা টীম উদ্ধার করে। এই সুইচ গিয়ারের সূত্র ধরে ঘটনাস্থলে একই রক্তাক্ত সুইচ গিয়ার পড়ে ছিল। যা বর্তমানে পুলিশ জব্দ করেছে। এভাবে র্যাবের ছায়া তদন্তে স্কুল ছাত্রী সুমাইয়া(১৬) হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে ট্রাক হেলপার মাদকাসক্ত মনিরকে শনাক্ত করে।
মনির সুমাইয়াকে খুন করার পর আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে তাকে প্রথমে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে সে।
উল্লেখ্য, বুধবার সকালে উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার শামসুল হক কলেজের সামনে নির্মাণাধীন ভবনের সিঁডির নিচ থেকে ওই ছাত্রীর জবাই করা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। একই সাথে অপর এক কিশোরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। নিহত শিক্ষার্থী ছুমাইয়া আক্তার (১৫) উপজেলার পালিমা এলাকার ফেরদৌস রহমানের মেয়ে। তারা দুজনেই এলেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিলো। বর্তমানে মনির বাসের হেলপারি করতো।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ