বরিশাল থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ নৌরুটে যাত্রী পরিবহন করছে অর্ধশতাধিক স্পিডবোট। এসব নৌযানের ফিটনেস সার্টিফিকেট ও রুট পারমিট না থাকার পরও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বরিশাল, ভোলাসহ প্রায় ১০টি রুটে।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ বলছে, তারা অবৈধ নৌযান চলাচল বন্ধে চিঠি দিয়েছে। সেই চিঠির ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার বরিশালে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান পরিচালনা করবেন।
জানা গেছে, বরিশাল নদীবন্দরসংলগ্ন স্পিডবোট ঘাট (ডিসি ঘাট) থেকে প্রতিদিন অবৈধভাবে প্রায় ৫০টি স্পিডবোট ছেড়ে যায়। বিআইডব্লিউটিএর কোনো রেজিস্ট্রেশন না থাকার পরেও এসব বোট বরিশাল-ভোলা, হিজলা- মেহেন্দিগঞ্জ, পাতারহাটসহ অভ্যন্তরীণ নদীপথের আট থেকে ১০টি রুটে চলাচল করে।
পাশাপাশি দক্ষিণের সব রুটে যাত্রী নিয়ে পারাপার করছে। জরুরি প্রয়োজনের অজুহাত দেখিয়ে প্রতিটি স্পিডবোটে ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে পাড়ি দিচ্ছে উত্তাল নদীপথ। এসব বোটে যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য নেই লাইফ জ্যাকেট।
অপরদিকে বরিশাল-ভোলা রুটে নিয়মিত ভাড়া আড়াইশ’ টাকা হলেও সময়সাপেক্ষে তা বাড়িয়ে তিনশ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ টাকা আদায় করে নিচ্ছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ। সরকারিভাবে কোনো তদারকি না থাকায় স্পিডবোট চালক ও মালিকরা নিজেদের খেয়ালখুশিমতো রুটটি নিয়ন্ত্রণ করছে বলেও জানান যাত্রীরা।
বরিশাল স্পিডবোট মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, এ সমিতির আওতায় ২৬টি এবং ভোলা স্পিডবোট সমিতির আওতায় ২৬টি চলাচল করে। তাদের ২৬টির মধ্যে ২০টি অবৈধ স্পিডবোট।
কীভাবে এসব অবৈধ স্পিডবোট চালান? এমন প্রশ্নের জবাবে সমিতির নেতারা জানান, বিষয়টি আপনারাও বোঝেন। সবাইকেই টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে কেউ তো চলাচল করতে দেবে না। বরিশাল জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নৌপথে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নৌপুলিশ গঠন করা হয়েছে। অবৈধ নৌযান বন্ধে তারা পদক্ষেপ নেবে। এ ক্ষেত্রে যদি জেলা প্রশাসনের সহযোগিতার দরকার হয়, তাহলে সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর সাহেবেরহাট চ্যানেলের কড়াইতলা খালে দুই স্পিডবোটের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. গোলাম সরোয়ার ও তার ভাগ্নে মো. খোকন এবং বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেলের চর্ম ও যৌন বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. প্রদীপ কুমার বণিক আহত হন। ওই বছরই ২৩ ডিসেম্বর রাতেও লাহারহাট চ্যানেলে অবৈধ স্পিডবোট সংঘর্ষে একজন নিহত ও একজন নিখোঁজ হন।
বিআইডব্লিউটিএ বরিশাল বন্দর ও পরিবহন বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অবৈধ স্পিডবোট চলাচল বিআইডব্লিউটিএ কোনোভাবেই সমর্থন করে না। বৈধভাবে একটি নৌযানের যাত্রী পরিবহন করতে হলে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর থেকে সার্ভে সনদ ও রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএ থেকে রুট পারমিট নিয়ে চলাচল করতে হবে। তাই অবৈধ নৌযান বন্ধের জন্য আমরা চিঠি ইস্যু করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার বরিশালে অভিযান পরিচালনা করবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ