নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের যোগেন্দ্রনগর গ্রামের আলুফা বেগমের নামটি ভিজিডির তালিকায় অন্তুর্ভুক্ত হয়েছেন প্রায় দশ মাস আগে। তালিকায় নাম তুলতে চেয়ারম্যানকে দিতে হয়েছে টাকা। তবুও অদ্যবধি ভিজিডির চাল পাননি আলুফা বেগম। তালিকায় নাম থাকলেও চাল না পাওয়ার দলে আলুফার মতো অন্তত ১২টি হত-দরিদ্র পরিবার ভিজিডির এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
শুক্রবার (২২অক্টোবর) ভুক্তভোগীরা এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তমাল হোসেনের কাছে। অভিযোগে ভিজিডির তালিকায় নাম থাকা সুবিধা বঞ্চিত ১২ জন নারীর স্বাক্ষর রয়েছে।
শুক্রবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী আলুফা বেগম বলেন, ‘দিনমজুরি করে কোনমতে দিনাতিপাত করছেন। পেটের তাগিদে ভিজিডি কার্ড পেতে চেয়ারম্যানের কাছে ধর্ণা দেন। কিন্তু ভিজিডির কার্ডে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে টাকার দাবি করেন চেয়ারম্যান। করোনাকালীন অভাবের সময়ও সুদের ওপর টাকা নিয়ে তালিকায় নাম উঠাতে বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে টাকা দিলেও আজ পর্যন্ত চাল পাননি তিনি।’
এছাড়া আরও ভুক্তভোগী ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তাসলিমা বেগম, সালমা বেগম, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পারভিন বেগম, শাপলা খাতুন ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রিনা খাতুন বলেন, আমরা দরিদ্র মানুষ হলেও ভিজিডির জন্য প্রায় দশমাস আগে চেয়ারম্যানকে টাকা দিয়েছি। সেসময় কার্ড দেওয়ার আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে বাছাইপর্বে নাম বাতিলের কথা জানান চেয়ারম্যান মোজাম্মেল। সম্প্রতি তাদের মধ্যে একজনের টাকা ফেরতও দিয়েছেন চেয়ারম্যান নিজেই।’
৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভুক্তভোগি নারী শিউলি বেগম বলেন, ‘সম্প্রতি জানতে পারেন ভিজিডির তালিকায় তাদের নাম আছে। কিন্তু ১২ জন দরিদ্রের চাল তুলে নেন চেয়ারম্যান নিজেই। একারণে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
বিয়াঘাট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোজাম্মেল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা কুৎসা রটাচ্ছেন। কিছু মানুষকে প্রভাবিত করে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন। তাছাড়া অভিযোগকারীদের নাম ভিজিডির তালিকায় রয়েছে। তারা কেন চাল পান না তা তিনি জানেন না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিয়াঘাট ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৩ জন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৪ জন, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ২ জন ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নারীর ভিজিডি চক্র-২০২১ এর তালিকা নাম রয়েছে। কিন্তু তারা দশ মাস যাবৎ সরকারি সুবিধার এই চাল পান না।
গুরুদুসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তমাল হোসেন অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘অভিযোগে তিনি জানতে পেরেছেন, ভিজিডির তালিকায় বিয়াঘাট ইউনিয়নের ১২টি হত-দরিদ্র পরিবারের নাম থাকা সত্তেও চাল পাচ্ছেন না। অথচ প্রায় ১০ মাস আগে এসব দরিদ্রদের নাম ভিজিডি কার্ডের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ