রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশকিছু বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৪২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে রোববার রাত ১০টার দিকে রামনাথপুর ইউনিয়নের মাঝিপাড়া-বটতলা ও বড়করিমপুর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৬০টি বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় গবাদিপশু, নগদ টাকা, খাদ্যসামগ্রী ও অলংকারসহ অনেক মালামাল লুট হয়েছে বলে দাবি করছেন ভুক্তভোগীরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক যুবক ধর্ম অবমাননাকর ছবি ফেসবুকে পোস্ট বা কমেন্ট করেছেন এমন অভিযোগে ওই যুবকের বাড়ি ঘিরে ফেলে উত্তেজনা সৃষ্টিকারীরা। এক পর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। এরপর ভয়ে ওই যুবক সপরিবারে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করে।
ঘটনার পরপরই পুলিশ সুপার, র্যাব-১৩-এর অধিনায়ক, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। রাত ১টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পুরো ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সেখানে রাতভর উপস্থিত থাকেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ।
পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী রায় জানান, রোববার রাতে বটেরবাজার মাঝিপাড়ায় সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে আরো সময় লাগবে।
জেলা পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার জানান, যার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে বেশকিছু হিন্দুদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে আগুন দেয় হামলাকারীরা। ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সেখানে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসনসহ সরকার দলীয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এছাড়াও এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পুলিশ। সোমবার দুপুর দেড়টা পর্যন্ত এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৪২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল ওয়াদুদ ভূইয়া, ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, জেলা প্রশাসক আসিফ আহসান, রংপুর পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার এবং রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এদিকে এ ঘটনার জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে রংপুর নগরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রলীগ। মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আসিফ বলেন, উস্কানিমূলক ফেসবুক পোস্ট নিয়ে ৫০টির মতো বাড়িঘর তারা পুড়িয়ে ফেলেছে। যারা ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আমরা অনুরোধ করছি।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ