করোনার কারণে দীর্ঘ প্রায় দুই বছর স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় রাজশাহী জেলার প্রায় সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষার্থীর বাল্য বিয়ে হয়ে গেছে। দারিদ্রতা, সচেতনতার অভাব ও স্কুল-কলেজ খোলা না থাকায় জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের এসব মেয়েরা স্কুল জীবন আর ফিরে পাচ্ছেন না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
করোনার কারণেই এই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে জানান নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিবর্গ। বর্তমানে স্কুল-কলেজ খুলে যাওয়ায় স্কুলের গণ্ডিতে আর দেখা মিলছে না এসব শিক্ষার্থীর। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরসহ সরকারি ও বেসরকারি সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে উঠান বৈঠকসহ হটলাইন নাম্বার চালু করা হয়েছে। যাতে আর কোনো শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার না হয়।
জেলা শিক্ষা অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীতে ষষ্ঠ থেকে ১০ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ১২ হাজার ১৬৩ জন। এদের মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ১ লক্ষ ৩ হাজার ৪০৭ জন। এর মধ্যে প্রায় ৬ হাজার ৫১২ জন শিক্ষার্থী বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছেন। রাজশাহীতে বাল্য বিয়ের হার দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ দশমিক ২৯ শতাংশের বেশি।
জেলার বাঘা উপজেলায় ৩ হাজার ৪৫৭ জন ছাত্রীর মধ্যে বাল্যবিয়ে হয়েছে ১২১ জন। এখানে বাল্য বিয়ের হার ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। বাগমারা উপজেলায় ২১ হাজার ৩৯০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বাল্য বিয়ে হয়েছে ১ হাজার ৭৮৫ জন। এখানে বাল্য বিয়ের হার সবচেয়ে বেশি ৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
চারঘাট উপজেলায় ৯ হাজার ৩১ জনের মধ্যে ৬৮৪ জন বাল্য বিয়ে হয়েছে। এই উপজেলায় বাল্য বিয়ের হার ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। দুর্গাপুর উপজেলায় ৬ হাজার ৬০২ জন ছাত্রীর মধ্যে ৪৯০ জন বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। এখানে বাল্য বিয়ের হার ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ।
গোদাগাড়ি উপজেলায় ১২ হাজার ৯৯২ জন ছাত্রীর মধ্যে ৮৭৩ জন বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। এই উপজেলায় বাল্য বিয়ের হার ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ।মোহনপুর উপজেলায় ৬ হাজার ৫৬০ জন ছাত্রীর মধ্যে বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে ৫০১ জন। এখানে বাল্য বিয়ের হার ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
পবা উপজেলায় ১১ হাজার ২৯৬ জনের মধ্যে বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে ৮৩০ জন। এখানে বাল্য বিয়ের হার ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
পুঠিয়ায় ৭ হাজার ৫৮৭ জনের মধ্যে ৪৬৫ জনের বাল্য বিয়ে হয়েছে। এই উপজেলায় বাল্য বিয়ের হার ৬ দশমিক ১২ শতাংশ। তানোরে ৮ হাজার ৪৪২ জনের মধ্যে বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে ৬৮০ জন। এখানে বাল্য বিয়ের হার ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। নগরীতে বাল্য বিয়ের হার কম।
নগরীর বোয়ালিয়া থানায় ৭ হাজার ২৫০ জনের মধ্যে ১৯ জন বাল্য বিয়ে হয়েছে। এখানে বাল্য বিয়ের হার ০ দশমিক ২৬ শতাংশ।
মতিহার থানায় ৮ হাজার ৮০০ জনের মধ্যে ৬৪ জনের বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। এখানে বাল্য বিয়ের হার ০ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে রাজশাহী জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শবনম শিরিন নয়া শতাব্দীকে বলেন, “করোনার প্রভার সর্বত্রই পড়েছে। বিশেষ করে করোনার কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় নারীদের সচেতনতা মূলক কর্মকাণ্ড একটু কমই হয়েছে। করোনায় উঠান বৈঠক বন্ধ ছিলো। স্কুল বন্ধ থাকায় সেখানে সমাবেশ করা যায়নি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে দারিদ্রতা ও সচেতনতার অভাবেই বাল্যবিয়ে শিকার হয়েছেন অনেক ছাত্রী। করোনার এ দুর্যোগকালীন বাল্য বিয়ে ও নারী প্রতি সহিংসতা বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি। তবে বর্তমানে উঠান বৈক আবারো চালু করা হয়েছে। স্কুলে সমাবেশসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড হাতে নেয়া হয়েছে। সর্বপরি বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে হটলাইন নাম্বার চালু করা হয়েছে। যাতে কোনো স্থানে এ ধরণের ঘটনার তথ্য আমরা সহজেই পেতে পারি। আমাদের সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলছে। বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ স্থানীয় প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদফতর কাজ করছে বলে জানান তিনি”।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচি (বিএলসি) রাজশাহী জোনাল ম্যানেজার সুফিয়া খাতুন গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে বাল্য বিবাহ রোধসহ নারী ও শিশুর মানবাধিকার নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ