ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনা

পরিবারের ৪ জনকে হারিয়ে দিশেহারা লাকি

প্রকাশনার সময়: ১৭ অক্টোবর ২০২১, ০১:০৫

দীর্ঘদিন ধরে ভাই-ভাবি আর ভাতিজা-ভাতিজির সঙ্গে দেখা নেই লাকি আক্তারের। পরিবারের সবাই বাড়িতে আসবে- সেই অপেক্ষাতেই ছিলেন তিনি। তবে ভাগ্য তাকে টেনে আনল ত্রিশাল থানা চত্বরে। এখন তাকেই অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের লাশের জন্য।

শনিবার রাত ৯ টার দিকে থানা চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের চারজনকে হারিয়ে এক গাছতলায় বসে কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারাচ্ছিলেন নিহত ফজলুল হকের বোন লাকি আক্তার। কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি।

প্রায় একই অবস্থা ছিল ট্রাকের সঙ্গে বাসের ধাক্কায় নিহত ফজলুল হক ওরফে হুজু’র চাচা রফিক মন্ডল। এই দুর্ঘটনায় নিহত সাত জনের চার জনই ওই পরিবারের।

রফিক মন্ডল রাস্তায় বসে বিলাপ করতে করতে জানান, নিহত ফজলুল হক তার আপন বড় ভাই কমর উদ্দিনের ছেলে। ভাতিজার পরিবারসহ তিনি ঢাকায় সবজির ব্যবসা করেন। সবাই একসঙ্গেই থাকেন। সুযোগ পেলেই তারা বাড়িতে যান। করোনার কারণে গত কোরবানির ঈদে বাড়ি যাননি। ১০ বছর বয়সী আব্দুল্লাহ প্রাইমারি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। আর নিহত আজমিনা (৮) প্রথম শ্রেণিতে পড়তো।

পরিবারের চারজন মারা গেলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন ফজলুল হকের চাচা রফিক মন্ডল। তিনিও ওই এলাকায় থেকে ভাতিজার কাছ থেকে আচার নিয়ে বিক্রি করতেন। তিনিও ওই পরিবারের সঙ্গে একই বাসে করে বাড়িতে আসছিলেন।

রফিক মন্ডল বলেন, আমারও আজ বেঁচে থাকার কথা ছিল না। তাদের সঙ্গে বাসের পেছনের দিকে ছিলাম আমিও। তবে ভালুকা আসার পর সামনে একজন নেমে গেলে আমি সামনে চলে যাই। আর তাতেই প্রাণেই বেঁচে যাই আমি। আমি এখন থানায় অপেক্ষা করছি ভাতিজার পরিবারের লাশ নেয়ার জন্য।

তিনি আরও জানান, ভাতিজা ফজলুর বড় শখ ছিল, গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ছেলের খৎনা করিয়ে আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীকে দাওয়াত করে খাওয়াবেন। এটা আর হয়ে উঠলো না। মনের দুঃখ রয়েই গেলো।

এদিকে দিশেহারা হয়ে বারবার লাকি আক্তার বলছিলেন, আমারে থুইয়া (রেখে) কই গেলা ও ভাই গো, ও ভাবি গো। এই মনেরে কী দিয়া বুঝামু গো আল্লাহ। চারজন মিইল্যা একলগে কই গেল গা।

জানা গেছে, মানিকগঞ্জের সিংগাইর এলাকায় ভাড়া বাসায় সপরিবারে থাকতেন ময়মনসিংহের ফুলপুরের বাসিন্দা ফজলুল হক। সেখানে আচারের ব্যবসা করতেন তিনি। ব্যস্ততার কারণে গেল ঈদেও বাড়িতে আসা হয়নি। তাই দীর্ঘদিন পর পরিবারের সবাই মিলে বাড়ি আসছিলেন তারা। তবে পথেই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ফজলুল হক, তার স্ত্রী ও ২ ছেলেমেয়ে।

বিকাল সোয়া ৩টার দিকে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার চেলেরঘাট এলাকায় ঘটে মর্মান্তিক এ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ওই পরিবারের চারজনসহ প্রাণ হারিয়েছেন সাতজন।

নিহতরা হলেন- ময়মনসিংহের ফুলপুরের ফজলুল হক (৩৫), স্ত্রী ফাতেমা বেগম (২৮), ছেলে আবদুল্লাহ (৬) ও মেয়ে আকমিনা (৮), ভালুকা উপজেলার নিশিন্দা এলাকার হেলেনা আক্তার (৪০), শেরপুরের নকলা উপজেলার নজরুল (৫৫) ও মিরাজ (৩৫)।

জানা গেছে, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ময়মনসিংহগামী দুইটি বাস পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে দ্রুত গতিতে যাচ্ছিল। এদিকে চেলেরঘাট এলাকায় একটি ড্রাম ট্রাক দাঁড়ানো ছিল। পাল্লা দিয়ে চলা দুটি বাসের মধ্যে একটি বাস ট্রাকটির পাশ দিয়ে চলে গেলেও শেরপুরের শ্যাপার এমএ রহিম পরিবহনের বাসটির পেছনের অংশ ট্রাককে ধাক্কা দেয়। এতে বাসটির পেছনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন ও ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও একজনের মৃত্যু হয়। মমেক হাসপাতালে আহত অবস্থায় বর্তমানে ১১ জন ভর্তি রয়েছেন। যাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা সংকটাপন্ন।

ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইন উদ্দিন জানান, ঘটনার পর থেকে চালক পলাতক থাকলেও তাকে ধরতে অভিযান চলছে। এছাড়াও লাশ নিহতদের পরিবারের লোকজনের হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ