উঁচুগাছের মগডালে বাদুর ঝুলে থাকা গ্রাম-গঞ্জের স্বাভাবিক দৃশ্য হলেও নগর জীবনে তা দুষ্কর। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অতিরিক্ত জনবসতি ও খাবার সংকটের কারণে গাছের মগডালে বাদুর ঝুলে থাকার দৃশ্য এখন বিলুপ্তির পথে।
উড়তে জানা একমাত্র স্তন্যপায়ী এই প্রাণীটি নানা প্রতিকূলতার মাঝেও রাজশাহী নগরীর পোস্টাল একাডেমির সামনে নওদাপাড়া এলাকার বণ্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বনাঞ্চলে নির্ভয়ে আবাস গড়ে তুলেছে।
রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়া এলাকার সরকারি বনবিভাগের এই বনাঞ্চলে বহু পুরনো রেন্টি কড়ই, মেহগনি ও বটগাছে বাসা বেঁধেছে হাজারো বাদুড়।
গাছগুলোর শাখা-প্রশাখায় হুকের মতো পা দুটো আটকিয়ে নিস্তব্ধতায় ঝুলে থাকে অসংখ্য বাদুড়। বাদুরগুলো গাছের মগডালে রাতের অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে একটু প্রশান্তির জন্য ঘুমায়। সন্ধ্যা হলেই বেড়িয়ে পড়ে খাবারের সন্ধ্যানে। সারারাত খাবারের খোঁজে ঘুড়ে বেড়ায়। আবার সকাল হলেও সেখানে কিচির-মিচির শব্দ পথচারীদের নজর কাড়ে।
নওদাপাড়া বনবিভাগের এই বনঞ্চালের পাশে ভাড়া থাকেন ব্যবসায়ী শাহিন আলম। তিনি নয়া শতাব্দীকে বলেন, আমার জন্মস্থানও নগরীর বাগানপাড়া এলাকায়। পিতা-মাতার কাছ থেকেও এখানে বাদুড়ের আবাসস্থলের গল্প শুনেছি। এখনও এই বনে বাদুড়ের বসবাস রয়েছে। আমি এই এলাকায় প্রায় ৪০ বছর ধরে বসবাস করছি। বাদুরগুলো স্থায়ীভাবে এখানেই আছে। একসময় আরও বেশি ছিল। কিন্তু এখন ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। সন্ধ্যা হলেই দলে দলে ছুটে যায় এরা খাবারের সন্ধানে। ঘুরে বেড়ায় এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায়। ভোরের আলো ফোটার আগেই দলবেঁধে আবার কড়ই ও বটগাছে ফিরতে শুরু করে এই স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলো।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট পাখি বিশেষজ্ঞ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. বিধান চন্দ্র দাস নয়া শতাব্দীকে বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে– বসবাস করা আমাদের দেশীয় পাখিরা পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারাতে চলেছে বাদুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। পাখিরা প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে অনেক প্রাণী বিশেষ করে অসংখ্য প্রজাতির কীট-পতঙ্গ ও নানা ধরনের অমেরুদণ্ডী প্রাণী এবং মাছসহ কয়েক প্রকার মেরুদণ্ডী প্রাণীও খেয়ে থাকে। আবার সুযোগ পেলে-তাদেরকে কিংবা তাদের ডিম অথবা ছোট বাচ্চাদের অন্যান্য বড় প্রাণী যেমন শিয়াল, সাপ, চিল এই সব প্রাণীরা খেয়ে থাকে। এই বিষয়টি যদি আমরা বিবেচনায় নেই, তাহলে দেখবো যে, তারা যতক্ষণ আমাদের দেশে থাকে- ততক্ষণই খাদ্য শৃঙ্খলের উপাদান হিসেবে কাজ করে। কাজেই সেই হিসেবে পাখি আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা পালন করছে।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া কিছু পাখি তো পরিবেশের নোংরা আবর্জনা খেয়েও আমাদের পরিবেশকে সুস্থ রাখার জন্য সাহায্য করে। এদের মধ্যে বাদুর অন্যতম। পরিবেশ সংরক্ষণে বাদুরসহ বিভিন্ন পাখি রক্ষায় কাজ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
পাখি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ নিয়ে করা বিশেষজ্ঞরা জানান, ‘বাদুড় মানবকল্যাণকারী ও পরিবেশবান্ধব একটি প্রাণী। এরা মানুষের উপকারই করে। বিশেষ করে কলা ও অ্যাভোকাডোসহ প্রায় ৩০০ রকমের গাছের বীজ ছড়াতে সাহায্য করে বাদুর। আবার কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসল রক্ষা করে। বাদুড়কে অনেক সময় ক্ষতিকর প্রাণী মনে করা হলেও এটি জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য অতি প্রয়োজনীয় প্রাণী বলে জানান পাখি বিশেষজ্ঞরা।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ