আবেদন জমা পড়লেই টাকার গন্ধ খোঁজেন দুর্নীতিবাজ পাসপোর্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী। তারা ‘চ্যানেল ফি’ এর নামে ঘুষের টাকা নেন ফাইল গুনে গুনে। সরকারের জনগুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরকে ঘিরে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন সহকারি হিসাব রক্ষক মোহাম্মদ আবুল মনসুর ও তার সহযোগিরা। মাঝে মাঝে খবরের কাগজের শিরোনাম হলে সহকারি পরিচালক বদলী হলেও মনসুর ও তার সহযোগিরা থেকে যান বহাল তবিয়তে।
অবৈধ আয়ের টাকা দিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ কতিপয় ব্যক্তিদের ম্যানেজ করার চেষ্টায় নামেন তারা। ফলে পাসপোর্ট অধিদপ্তর হয়রানি ও ভোগান্তিমুক্ত পরিবেশে পাসপোর্ট সরবরাহের নানা উদ্যোগ নিলেও তা ভেস্তে যাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাসপোর্ট অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা ও ট্রাভেল এজেন্সির সাথে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। পাসপোর্ট প্রতি ব্যাংক ড্রাফটের পর নির্ধারিত সীলের মাধ্যমে ‘চ্যানেল ফি’ জমা করতে হয় ১ হাজার ৫শ টাকা। ফেনী শহরে বিভিন্ন ট্রাভেলস এজেন্সির কাছে এ ধরনের ২৭ টি সীল রয়েছে। প্রতি সীলের বিপরীতে সপ্তাহে কমপক্ষে ২০টি আবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হলে ওই এজেন্সির সীল বাতিল করা হয়। এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করতে গেলে চ্যানেল ফির টাকা নিয়ে অনেকটা বাধ্যতামূলক সীল লাগিয়ে দেয়া হয়।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গতসপ্তাহে ৯টা সীল বাতিল করা হয়। মাসে ৩০টি আবেদন থেকে ট্রাভেলস এজেন্সি সমিতি সম্মানি পায়। ট্রাভেলস এজেন্সির কাছ থেকে সংগৃহীত চ্যানেল ফি এর টাকার হিসাব রাখেন মোহাম্মদ আবুল মনসুর। তারপর ভাগবাটোয়ারা করেন উচ্চমান সহকারী ওমর ফারুক জিসান ও মনসুর।
সূত্র আরো জানায়, প্রতিদিন বিকেলে পাসপোর্ট অফিস থেকে তালিকা সংগ্রহের পর সন্ধ্যার মধ্যে ট্রাভেল এজেন্সি থেকে চ্যানেল ফি সংগ্রহ করা হয়। এরপর রাত ৮টার দিকে শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের জামাল ব্রেড সংলগ্ন একটি ট্রাভেলস এজেন্সিতে বসে পাসপোর্ট অফিসের কতিপয় ব্যক্তি হিসাব কষেন। মাঝেমধ্যে স্থানও বদল করা হয়। রাত ৯টায় ওই টাকা চলে যায় পাসপোর্ট অফিসে। এছাড়া সেবাগ্রহীতাদের সারিতে এগিয়ে দেয়া থেকে দ্রুততম সময়ে পাসপোর্ট প্রদানের আশ্বাস দিয়ে টাকা আদায় করেন দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাসপোর্ট অফিসের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মাঝে মাঝে চ্যানেল ফি বন্ধসহ পাসপোর্ট অফিসকে দূর্নীতিমুক্ত করার উদ্যোগ নিলেও সেটি শেষ পর্যন্ত সফল হয় না। ফলে দুষ্টচক্রের জিন্মিদশা থেকে মুক্ত হতে পারছে না পাসপোর্ট সেবা। ইতিপূর্বে কয়েকজন সহকারি পরিচালককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল দূর্নীতি বন্ধ করার জন্য। কিন্তু দুর্নীতিবাজ চক্রের রোষানলে পড়ে তারাও অসহায় হয়ে বদলী হয়ে যান।
এ ব্যাপারে ফেনী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সদ্য নিযুক্ত সহকারি পরিচালক সাধন সাহার বক্তব্য জানা যায়নি।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ