বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি স্বাভাবিক ঘটনা। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। মধ্য আষাঢ়ে গত বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ৮৮ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে এটিই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। ফলে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। যার কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পদ্মা পাড়ের মানুষ। বিশেষ করে রাজশাহী জেলার সীমান্তবর্তী বাঘা ও চারঘাট উপজেলার মানুষ পদ্মার ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এখন তাদের চোখে ঘুম নেই। উজান থেকে বেয়ে আসা পানি এবং অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে পদ্মা নদীর পানি ব্যাপকহারে বাড়ছে। এতে চারঘাট উপজেলার পদ্মা নদী তীরবর্তী এলাকা গোপালপুর, পিরোজপুর, রাওথা, চন্দনশহর, ইউসুফপুর, ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছেন মানুষরা।
ভাঙনের শিকার হয়ে অনেকে বাড়িঘরসহ সহায়-সম্বল সব হারিয়েছেন। নিজের মাথা গোঁজার সর্বশেষ আশ্রয়স্থলও অনেকে হারিয়ে নিঃস্ব জীবন যাপন করছেন।
স্থানীয়রা জানান, বাঘা-চারঘাটে পদ্মা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে হাজরাহাটির পুরো মৌজা, চন্দনশহরের অধিকাংশ এলাকা, রাওথা ও পিরোজপুর মৌজার অনেক এলাকা।
এবছরও পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে আতঙ্কে রয়েছেন চারঘাটের পদ্মা তীরবর্তী বাসিন্দারা। এবছর পানি বৃদ্ধির ফলে নদী ভাঙন প্রকট হলে উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ হুমকির মুখে পড়বে বলে জানিয়েছেন চারঘাট ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য তজলুল হক।
উপজেলার রাওথা চাটাইপাড়ার এলাকার নদীর তীরবর্তী বাসিন্দা ফকির মোহাম্মদ (৭০) ও মুনছার (৬০) জানান, ইতিমধ্যে ইউসুফপুর ইউনিয়নের টাঙ্গন ও রাওথা গ্রামের নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে আমরা চরম আতঙ্কে রয়েছি। নদীর পানির জোয়ারে কাচাঁবাধ ভেঙ্গে চাটাইপাড়া জামে মসজিদ ও আমাদের বসতবাড়িঘর নদীগর্ভে চলে যেতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা তীরবর্তী চারঘাট সীমানায় প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ তীরবর্তী এলাকা। তীরবর্তী জায়গায় মানুষের বসবাস রয়েছে। ইতিমধ্যে সেখানকার তীরবর্তী এলাকার প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকা ব্লক দিয়ে পাঁকা বাঁধ দেয়া হয়েছে। বাকি তীরবর্তী এলাকা অরক্ষিত বা কাঁচা বাঁধ। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙ্গন দেখা দিলে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় বালু ভর্তি জিওবি ব্যাগ ফেলে সাময়িকভাবে কাঁচা বাঁধ রক্ষার চেষ্টা চলে।
তবে আশার কথা হলো এই বাঘা-চারঘাটের ভাঙনরোধে হাতে নেয়া হয়েছে বড় প্রকল্প। এই উপজেলাগুলোতে ভাঙন রোধে কি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে নয়া শতাব্দীকে বিস্তারিত বলেছেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজশাহী উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ সারওয়ার-ই-জাহান
তিনি বলেন, বাঘা-চারঘাটে ভাঙন রোধে ৪ হাজার ১০০ মিটার ব্লক দিয়ে পাকা বাঁধ তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া এই প্রকল্পের আওতায় বাঘা উপজেলার ১২ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং করা হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, চারঘাট ও বাঘা উপজেলার নদী তীরবর্তী মানুষের ঘরবাড়ি ও জমি রক্ষার্থে ৭২২ কোটি ২৪ লাখ টাকার প্রকল্পের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে ব্লক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। আমাদের জিও ব্যাগ প্রস্তত রাখা হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় লোকজন ক্ষতির সম্মুখীন হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া এই প্রকল্পের কাজ আগামি ২০২২ সালের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ