ঢাকা, বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬

বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে রিসোর্ট ও জমি দখলের অভিযোগ

প্রকাশনার সময়: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:১১

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ইনানী এলাকায় পুলিশ পরিচয়ে একজন ব্যক্তিকে অপহরণের পর তার রিসোর্ট ও জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি ও যুবদল নেতাদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী পরিবার ২৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দায়ের করেছে।

অভিযোগপত্রে বিএনপি নেতা শামশুল আলম, যুবদল নেতা আমিন উল্লাহ, সাবেক নেতা ইউসুপসহ অজ্ঞাত ১৫-২০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ৯ জানুয়ারি ভোরে উখিয়া উপজেলার ইনানী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, পুলিশ পরিচয়ে তাদের রিসোর্ট ও জমি দখল করা হয়। জমির সঙ্গে ছৈয়দ আহমদ কটেজ ও মাছের প্রজেক্টসহ ২৫ শতক জায়গা জোরপূর্বক দখল করা হয়।

অপহরণের শিকার রুহুল আমিন, জালিয়া পাইন্যাশিয়া এলাকার মৃত বদিউল আলমের ছেলে (৩০), এজহারে উল্লেখ করেন, ভোর ৪টার দিকে পুলিশ পরিচয়ে ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির নামে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না দেওয়ায় শামশুল আলম, আমিন উল্লাহ ও ইউসুপের নেতৃত্বে আরও কয়েকজন তাকে পাশের একটি কটেজে বন্দি করে রাখে। অভিযুক্তরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে জমি ও রিসোর্ট দখল করে।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য নূর নাহার বেগম জানান, তার পিতা ছৈয়দ আহমদ ১৯৮১-৮২ সালে ২৪৭ নং সার্টিফিকেট মোকাদ্দমার মাধ্যমে ২ একর ৬৪ শতক জমি নিলামে ক্রয় করেন। পরে মিউটেশন মোকাদ্দমার মাধ্যমে ১৯৮৪-৮৫ সালে খতিয়ান সৃজন করেন। আদালতের একাধিক রায়ে জমির মালিকানা ছৈয়দ আহমদের পরিবারের পক্ষেই আসে। তবে স্থানীয় একটি চক্র ভুয়া দলিল দেখিয়ে জমি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

জমি দখলের পর সোনারপাড়া তহসিল অফিসের তহসিলদার রাশেদা এবং অস্থায়ী কর্মচারী রাসেল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং দখল করা জায়গায় ছৈয়দ আলম নামের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ছবি তোলেন।

তহসিলদার রাশেদা জানান, ‘আমাদের বিভাগীয় কমিশনার স্যার সাইনবোর্ডের ছবি তুলে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। তাই ছবি তোলা হয়েছে। সার্ভেয়ার আজিজ ভাইও উপস্থিত ছিলেন।’

সার্ভেয়ার আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা তদন্তের জন্য গিয়েছি। জমি দখল অন্যরা করেছে, আমরা শুধু সাইনবোর্ডের ছবি তুলে প্রতিবেদন দিয়েছি। বিষয়টি উখিয়া এসিল্যান্ড এবং বিভাগীয় কমিশনার জানেন।’

ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং ভূমি কমিশনার (এসিল্যান্ড) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

এসিল্যান্ড যারিন তাসনিম তাসিন বলেন, ‘জেলার বাইরে ছিলাম। তবে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার স্যার আরেকটি তদন্ত করেছেন। এর আগেও একটি অংশের প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছিল।’

জায়গা দখলের পর তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া কতটুকু আইনসঙ্গত, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি শুধু আদেশ পালন করছি। বাকিটা আদালত বলবেন।’

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) নুরুল্লাহ নরীকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফ হোসেন জানান, ‘আমার কাছে একটি এজাহার জমা পড়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’

এসআই শুভ্রত জানান, ‘ভুক্তভোগীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। জমি ও রিসোর্ট দখলের বিষয়ে ভুক্তভোগীর অভিযোগ যাচাই করে সত্যতা পেয়েছি।’

অভিযুক্ত শামশুল আলম মেম্বার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘অপহরণ ও জমি দখলের সময় উপস্থিত ছিলাম না। বিষয়টি সম্পর্কে কিছু জানি না।’

উখিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সুলতান মুহাম্মদ চৌধুরী বলেন, ‘জমি দখলের বিষয়ে কাগজপত্র যার পক্ষে থাকবে, তিনিই মালিক হবেন। আমি কোনো পক্ষকে ইন্ধন দেইনি।’

ভুক্তভোগী পরিবার জমি ও রিসোর্ট পুনরুদ্ধারে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তারা বলছেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে আইনি প্রক্রিয়া মেনে জমির মালিকানা ধরে রেখেছি। কিন্তু সন্ত্রাসী চক্র আমাদের জমি দখল করে অন্যায়ভাবে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে।’

এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী নূর নাহার বেগম জানান, এর আগে জায়গা দখলে নিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ ও কক্সবাজারের ১ আসনের সাবেক এমপি জাফর আলম তাদের পরিবারকে ৩০টির মতো মিথ্যা মামলা দিয়েছিলেন। পরিবারের দুই সদস্য রফিক উদ্দিন, তায়সার উদ্দিন এবং আনোয়ার ইসলাম বাবুলকে চিরতরে পঙ্গু করে দিয়েছেন। এখন আবার দখলদারদের পক্ষে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতারা ব্যবহৃত হচ্ছেন। তারা হুমকি দিয়ে বলছেন, ‘বিচারককে কিনে নিয়েছি, রায় আমাদের পক্ষেই হবে।’

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ