খুলনা-রাজবাড়ী-ঢাকা রুটে ট্রেনের সময় সূচির পরিবর্তনে বেসরকারি নকশীকাঁথা মেইল ট্রেন বাড়তি সুযোগ পাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সময় সূচির এ পরিবর্তনে চরম বিপাকে পড়েছে ভাঙ্গা-রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া রুটে চলাচলকারী সরকারি ট্রেন রাজবাড়ী-১ আপ ও রাজবাড়ী-২ ডাউন ট্রেনটি। প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ট্রেনের সাধারণ যাত্রী ও সংশ্লিষ্টরা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে খুলনা থেকে ঢাকাগামী বেসরকারি নকশীকাঁথা মেইল ট্রেনটির সময়সূচি পিছিয়ে দেয়া হয়। ট্রেনটি রাজবাড়ী স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেত সকাল সাড়ে ৬টায়। কিন্তু পরিবর্তিত সময় অনুযায়ী ট্রেনটি বর্তমানে ছেড়ে যাচ্ছে ৫০ মিনিট সময় পিছিয়ে ভোর ৫: ৪০ মিনিটে।
এদিকে নকশীকাঁথা মেইল ট্রেনের সময় এগিয়ে দেয়ার প্রভাব পড়েছে ভাঙ্গা-রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া রুটে চলাচলকারী সরকারি ট্রেনের উপর।
ট্রেনটি প্রতিদিন ভোর ৬টায় রাজবাড়ী-১ আপ নামে ভাঙ্গার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেত। কিন্তু বর্তমানে এটি ৩৫-৪০ মিনিট বিলম্বে ছাড়ছে। এতে ট্রেনটির যাত্রী সংখ্যা কমে সরকারি রাজস্ব আয় কমে গেছে। বাড়তি যাত্রী ও রাজস্ব পাচ্ছে বেসরকারি নকশীকাঁথা মেইল ট্রেন কতৃপক্ষ।
সরেজমিন দেখা যায়, শনিবার বেসরকারি নকশীকাঁথা মেইল ট্রেনটি খুলনা থেকে সকাল ৬:০৯ মিনিটে রাজবাড়ী স্টেশনে আসে। টানা ২৬ মিনিট অপেক্ষার পর যাত্রী বোঝাই করে ছেড়ে যায় ৬:৩৫ মিনিটে। এর আগে থেকে রাজবাড়ী স্টেশনে অপেক্ষমান সরকারি ট্রেনের সকল যাত্রী নেমে চলে যায় নকশীকাথায়। সকাল ৬:৪৫ মিনিটে এক প্রকার ফাঁকা ট্রেন ভাঙ্গার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
আলাপকালে দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, ট্রেনটির ভাঙ্গা স্টেশনে পৌঁছানোর সময় সকাল ৭:৪৫ মিনিটে। কিন্তু রোববার তা পৌঁছায় এক ঘণ্টা বিলম্বে।
অপরদিকে ভাঙ্গা স্টেশন থেকে ট্রেনটি রাজবাড়ী-২ ডাউন নামে সকাল ৮:১০ মিনিটে ভাটিয়াপাড়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু শনিবার তা ছাড়ে সকাল ১০টায়। ট্রেনটি ফরিদপুর স্টেশনে পৌঁছানোর কথা সকাল ৮:৫৮ মিনিটে। কিন্তু পৌঁছায় ১০:৪৫ মিনিটে। ক্রসিংয়ের কারণ সেখানে আরো অন্তত ১ ঘণ্টা অপেক্ষার পর ট্রেনটি ফরিদপুর স্টেশন ছাড়ে।
সূত্র আরো জানায়, ফরিদপুরের আমিরাবাদ, তালমা ও পুখুরিয়া স্টেশনে মাস্টার না থাকার কারণ সেখানে অন্যান্য ট্রেনের ক্রসিং করতে রাজবাড়ী-২ ডাউন ট্রেনটিকে ফরিদপুর স্টেশনে বাধ্য হয়ে অপেক্ষা করতে হয়। এতে সাধারণ যাত্রীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। সরকারি ট্রেনের ষ্টাফদের সাথে এ নিয়ে চলে যাত্রীদের বাক-বিতণ্ডা।
ট্রেনের কয়েকজন যাত্রী জানান, কয়েকদিন আগেও তারা খুব স্বস্তিতে সরকারি ট্রেনে রাজবাড়ী, ভাঙ্গা ও ভাটিয়াপাড়ার মধ্যে চলাচল করতেন। কিন্তু সময় পরিবর্তনের পর থেকে ট্রেনটির শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। প্রচণ্ড হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে তাদের।
এ প্রসঙ্গে ভাঙ্গা স্টেশন মাস্টার জিল্লুর রহমান ফোনে জানান, নকশীকাথা ট্রেনটির সময়সূচি পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি ট্রেনের সময়সূচি অপরিবর্তিত থাকলেও প্রকৃতপক্ষে লম্বা সময় বিলম্ব হচ্ছে। তারপর আমিরাবাদ, তালমা ও পুখুরিয়া ষ্টেশনে মাস্টার না থাকার কারণে অন্য ট্রেনের ক্রসিংয়ে পড়ে ফরিদপুর স্টেশনে লম্বা সময় আটকে থাকতে হচ্ছে ভাটিয়াপাড়াগামী রাজবাড়ী-২ ডাউন সরকারি ট্রেনটিকে। এ সকল স্টেশনে মাস্টার থাকলে এ ভোগান্তি পোহাতে হতো না।
এ বিষয়ে রাজবাড়ীর স্টেশন মাস্টার তন্ময় দত্ত জানান, নকশীকাঁথা মেইল ট্রেনের সময় পিছিয়ে দেয়াতে ঢাকাগামী সাধারণ যাত্রীদের জন্য উপকার হয়েছে। তবে এ কারণে সরকারি ট্রেনের যাত্রী ও আয় কিছুটা কমেছে।
এ সকল প্রসঙ্গে কথা বলতে রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ট্রান্সপোর্টেশন অফিসার (ডিটিও) হাসিনা খাতুনের ফোনে যোগাযোগ হয়। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি বলেন, ট্রেনের মধ্যে আছি। আপনার কথা ঠিকমতো বুঝতে পারছি না। পরে কথা বলব।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ