ঢাকা, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ৯ রজব ১৪৪৬

ভোগান্তি যেন নিত্যসঙ্গী পর্যটকদের

প্রকাশনার সময়: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:৪০

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্পট হলেও অব্যবস্থাপনার কারণে দ্বীপটি তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটকের সমাগম হয়। টেকনাফের দমদমিয়া থেকে ৬টি জাহাজে পর্যটকরা যাতায়াত করে আসছে।

প্রবাল দ্বীপটি আকর্ষণীয় স্পট হলেও স্থানীয়ভাবে তেমন অবকাঠামো দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। পর্যটকদের এ নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করতে শোনা যায়। টেকনাফ টু সেন্টমার্টিন নৌরুটে দিক নির্দেশনামূলক বয়া না থাকায় স্রোতের টানে মিয়ানমারের নৌসীমায় চলে যায় এবং অনেক সময় যাতায়াতকারী জাহাজ চোরাবালিতে আটকে পড়ে।

কিন্তু এসবের পরেও পর্যটকদের যেতে হয় জাহাজে চড়ে। আর জাহাজ থেকে দ্বীপে নামার একমাত্র উপায় হল জেটি। কিন্তু অযত্ন আর অবহেলায় জেটিটি এখন ভঙ্গুর ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে পর্যটক ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের দ্বীপে ওঠানামা করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

দ্বীপের একমাত্র জেটিটি উপরে দেখতে ফিটফাট হলেও ভেতরের কাঠামো নাজুক হয়ে গেছে। বিভিন্ন অংশের দুই পাশের রেলিং ভেঙে পড়েছে, পিলারে ধরেছে ফাটল, নিচের অংশের পুরো আস্তরণ উঠে বিপজ্জনকভাবে বেরিয়ে পড়েছে রড। জায়গায় জায়গায় তক্তা বিছিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেটির মধ্যভাগে নৌযানে ওঠানামার জন্য নির্মিত দুটি সিঁড়িও ভেঙে পড়েছে। সেখানেও তক্তা বিছিয়ে লোকজনকে নৌকায় ওঠানামা করতে হচ্ছে।

সেন্টমার্টিন ঘুরতে আসা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আরমান বলেন, পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণে আসে। কিন্তু জেটি থেকে নামতে ঝুঁকির কারণে পর্যটকদের ভ্রমণের আনন্দ মাটি হয়ে যাচ্ছে। জেটির দুইপাশের রেলিং ভেঙে বিপজ্জনকভাবে বেরিয়ে পড়েছে রড। হুড়োহুড়ি করে জেটিতে হাঁটতে গিয়ে আমাদের বন্ধু নায়েম বের হয়ে থাকা রডে আঘাত পেয়ে আহত হয়েছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, বঙ্গোপসাগরের বুকে সাড়ে আট বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। এ দ্বীপে বসবাস করা স্থানীয় বাসিন্দা প্রায় ১০ হাজার। আগে পর্যটন মৌসুমে প্রচুর লোক দ্বীপে বেড়াতে আসলেও চলতি মৌসুমে প্রতিদিনই পর্যটকবাহী পাঁচটি জাহাজে দুই হাজারের মতো পর্যটক দ্বীপে আসা-যাওয়া করছেন।

আর দ্বীপে আসা পর্যটক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ স্থানীয় বাসিন্দা সবার জন্যই জেটিটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। জাহাজ কিংবা ট্রলারের যাত্রী বা মালামাল নিয়ে আসা নৌযান দ্বীপের একমাত্র জেটিতেই ভিড়তে হয়। কিন্তু সংস্কারের অভাবে এখন এর অবস্থা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।

তিনি আরও জানান, জেটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কক্সবাজার জেলা পরিষদের। গত জুন মাসে জেলা পরিষদ জেটি সংস্কারের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দিলেও এখনো কাজ শুরু হয়নি।

দ্বীপের বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ বলেন, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে জেটির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর টানা ১১ বছর জেটির সংস্কার হয়নি। কয়েক বছর আগে জেলা পরিষদ কিছু সংস্কার করলেও জেটির নাজুক অবস্থা কাটেনি। এ ছাড়া প্রতিবছর পর্যটন মৌসুম শুরুর আগে জেটিতে ছোটখাট সংস্কার হলেও এই বছর কোনো কাজই হয়নি।

সেন্টমার্টিনে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা পর্যটক ঢাকা ব্যাংকের ম্যানেজার আবুল ফয়েজ বলেন, জাহাজ থেকে জেটিতে নামতে এক ঘণ্টা পার হয়ে গেল। জেটির পন্টুনে নামার সঙ্গে সঙ্গে অন্য পাশে আর একটি জাহাজ ভিড়তেই গিয়ে জাহাজের ধাক্কায় জেটি কাঁপতে থাকে মনে হচ্ছে ভূমিকম্প হল। এরপর জাহাজের সব পর্যটক ভাঙা জেটিতে নামতে হুড়োহুড়ি করে শুরু করেন। এতে আমার স্ত্রী-দুই শিশুসন্তান নিয়ে জেটি দিয়ে হেঁটে যেতে খুবই ঝুঁকিতে পড়ি। একসঙ্গে হুড়োহুড়ি করে হাজারো পর্যটক নামতে গিয়ে কেউ কেউ ভাঙা রেলিং দিয়ে সাগরে পড়ে যাওয়ার উপক্রমও হয়।

তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া মালামাল বহনের যানবাহনও জেটিতে ঢুকতে দেওয়া হয় না। পুরো জেটি পর্যটকদের হেঁটে পার হতে হয়। হেঁটে যাওয়ার সময় জেটির তলায় বিছানো কাঠের তক্তা কিংবা ভাঙা তক্তায় পা আটকে পড়ে যায় পর্যটকদের। আটকে যায় ব্যাগের বা ট্রলির চাকা। এ ছাড়া বয়স্ক স্বজনকে নিয়ে জেটিতে নামার সময় বিপাকে পড়েছেন বলে জানান সেন্ট মাটিনে বেড়াতে আসা আরেক পর্যটক আলমগীর।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুরুল আলম বলেন, দুই বছর আগে এক কোটি ৬০ লাখ টাকা খরচ করে জেটিতে পন্টুন ও ফুটো অংশে কাঠের তক্তা বিছানো হয়। কিন্তু রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে সেসব তক্তা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন জেটির অবস্থা নড়বড়ে। সতর্কতার সঙ্গে পর্যটকদের জাহাজে ওঠানামা করানো হয়। নতুন জেটি নির্মাণ হলে ঝুঁকি কমে যাবে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল মারুফ বলেন, জেটি সংস্কারের জন্য প্রায় সাত কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে, ঠিকাদারও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে সেপ্টেম্বর থেকে সংস্কার কাজ শুরুর কথা থাকলেও সাগর উত্তাল থাকায় সম্ভব হয়নি। নভেম্বর থেকে পর্যটকের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত রাখা হয়। এ কারণে তখনও জেটির সংস্কার কাজ শুরু করা যায়নি।

তিনি বলেন, ৩১ জানুয়ারির পর সেন্টমার্টিনে পর্যটকের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাবে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই জেটির কাজ শুরু হবে। জেলা পরিষদের কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান জেটির বেশিরভাগ অংশ বালুতে দেবে গেছে। নতুন জেটির উচ্চতা বাড়বে, তাতে পর্যটকদের ওঠানামার সুবিধা হবে। এ ছাড়া রেলিংসহ বিভিন্ন কাজে লোহার পরিবর্তে স্টিলের অবকাঠামো লাগানো হবে।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ