ঢাকা, বুধবার, ৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬

কাজে আসছে না অর্ধকোটি টাকার নৌ-অ্যাম্বুলেন্স

প্রকাশনার সময়: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:৫৪

দেশের একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলার দুর্গম জনপদের মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে সরকারের দেয়া প্রায় ৩০ লাখ টাকার নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি একদিনের জন্য জন্যও কাজে আসেনি। এটি বছরের পর বছর খালে পড়ে থাকা ছাড়া আর কোন কাজ হয়নি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভেতরে ময়লা-আবর্জনা জমে রোগী পরিবহনের অনুপযোগী হয়ে গেছে। এটি একদিনও না চললেও ৫০ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে ডিজেল খরচ।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, উপকূলীয় দুর্গত এলাকার মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার প্রকল্পের মাধ্যমে তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ দেয় সরকার। বরাদ্দ অনুযায়ী ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি তজুমদ্দিন হাসপাতালে এটি হস্তান্তর করা হয়। এটির বরাদ্দ মূল্য ছিলো ৩০ লাখ টাকা।

সরেজমিনে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্সটি শশীগঞ্জ সুইজঘাটের দক্ষিণ পাশে বেড়িবাঁধের ভিতরে (নদীর সাথে সংযোগ নেই) খালের অকেজো অবস্থা পড়ে আছে। সামনের ও পাশের গ্যাস এবং মেশিনপত্র ভাঙা। ভেতরে রোগী শোয়ার ও স্বজনদের বসার সিট নেই। যে কারণে রাষ্ট্রের ৩০ লাখ টাকা গচ্চা ছাড়া আর কোন কাজে আসেনি। একদিনের জন্য চলেনি এবং বহন করতে পারেনি একজন রোগীও। এসবের মধ্যে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে চর জহিরউদ্দিন ও চর মোজাম্মেলে চলাচল বাবদ ৫০ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে তেল খরচ দেখিয়ে। যদি তেল খরচের কোন বিল-ভাউচার দেখাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

উপজেলার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল চর মোজাম্মেল, চর জহিরউদ্দিন, চর নাসরিন, সিডার চর, চর উরিলে বসবাসরত মানুয়ের জরুরি চিকিৎসাসেবা সরকার এটি বরাদ্দ দিলেও একদিনের জন্যও কাজে আসেনি চরবাসীর।

ভোলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানসহ নানা কারণে তজুমদ্দিন উপজেলার অ্যাম্বুলেন্সটি ২০২০ সালের ২২ মে বিকল দেখানো হয়। কিন্তু ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি আউটসোসিং থেকে মহিউদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে ড্রাইভার হিসেবে ৫ দিনের ট্রেনিং করায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার প্রকল্প মাধ্যমে তাকে বেতন-ভাতা প্রদান করা হয়।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বছরের পর বছর নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি পড়ে থেকে নষ্ট হয়েছে। চরাঞ্চলবাসীর কোনো কাজেই আসেনি, এটি চরাঞ্চলের মানুষ যে কোন সমস্যায় শশীগঞ্জ সুইজঘাটের ট্রলারে পারাপার হয়ে থাকে। রাতে কারও চিকিৎসা বা অন্য জরুরি প্রয়োজনে ঘাটের মাঝিদের ফোন দিলে তারাই পার করেন তাদের।

শশীগঞ্জ সুইজঘাটের ব্যবসায়ী মো. আব্দুল্যাহ বলেন, চরাঞ্চলের মানুষের জন্য নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি বরাদ্দ দেয়া হলেও এটি চরবাসীর কোন কাজেই আসেনি। এ পর্যন্ত একজন রোগীও বহন করতে পারেনি অ্যাম্বুলেন্সটি। বর্তমানে শশীগঞ্জ সুইজঘাটের দক্ষিণ পাশে বেড়িবাঁধের ভিতরে একটি খালের মধ্যে অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষেরা বলেন, সরকার আমাদের জন্য এমন একটি বাহনের ব্যবস্থা করছেন তা আমরা জানি না। আপনাদের কাছে শুনলাম।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. উত্তম কুমার সরকার বলেন, এখানে নতুন যোগদান করেছি। তারপরও যতদূর জানতে পেরেছি কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার প্রকল্পটি বন্ধ হওয়ার কারণে এটি চালু করা সম্ভব নাও হতে পারে। এটি একেবারেই মেরামতের অযোগ্য বর্তমানে। তবুও যোগাযোগ করে দেখতে হবে অ্যাম্বুলেন্সটি কি করা যায়।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ