কক্সবাজারের টেকনাফে বেড়ে চলেছে অপহরণের সংখ্যা। একদিনের ব্যবধানে দুই সিএনজি চালকসহ আরও ৯ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন। এর আগে সোমবার টেকনাফ বন বিভাগের পাহাড়ে কাজ করার সময় ১৮ জন শ্রমিককে অপহরণ করা হয়। এনিয়ে মোট অপহৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৭। পুলিশ, র্যাব ও এপিবিএন যৌথ অভিযান চালালেও এখনো কেউ উদ্ধার হয়নি।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল ৮টার দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং-শামলাপুর সড়কে সর্বশেষ এই অপহরণের ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি জানিয়েছেন শামলাপুর সিএনজি অটোরিকশার লাইনম্যান মো. আবদুর রহিম।
এ ছাড়া আগের রাতে টেকনাফের বড় ডেইল এলাকা থেকেও জসিম উদ্দিন নামের আরেকজনকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের সময় দুর্বত্তরা ১৫ থেকে ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও অপহৃতদের নাম-পরিচয় এবং মোট কতজন অপহরণ হয়েছে তার সঠিক তথ্য জানাতে পারেনি পুলিশ। তবে উদ্ধারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক শোভন কুমার শাহা।
এদিকে, সোমবার টেকনাফ উপজেলা হ্নীলার ইউনিয়নের জাদিমোরা পাহাড় থেকে বন বিভাগের ১৮ জন শ্রমিককে অপহরণ করা হয়।
বন বিভাগের টেকনাফের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বন বিভাগের কাজ করতে গিয়ে তাদের অপহরণ করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ, এপিবিএন, র্যাব ও বন বিভাগের কর্মীসহ স্থানীয় জনগণ পাহাড়ে অভিযান চালাচ্ছেন। কাউকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে টেকনাফ থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
অপহৃত বনকর্মী সাইফুল ইসলামের বাবা জুহুর আলম জানান, তার ছেলের মুক্তিপণ হিসেবে এক লাখ টাকাসহ অপহৃত ১৮ জনের জন্য ১৮ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে। টাকা দিতে না পারার কথা বললেই ছেলেকে মারধর করা হচ্ছে। এরপর নির্যাতনের বিষয়ে ছেলের মাকে ফোন দিয়ে জানানো হচ্ছে। র্যাব বা পুলিশ নিয়ে ঝামেলা করলে অপহৃতদের মরদেহ পাঠানোর হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।
অপরদিকে, অপহৃত আনসার উল্লাহ ও আয়াত উল্লাহর মা খতিজা বেগম জানান, সন্ত্রাসীরা তাদের দুই ছেলের জন্য এক লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করেছে। তিনি বলেন, 'টাকা না দিলে দুই ছেলের মরদেহ নিতে প্রস্তুত থাকার জন্য হুমকি দিচ্ছে।'
কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের দেয়া তথ্য বলছে, গত এক বছরের বেশি সময়ে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৫৩ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে ৯৪ জন স্থানীয় বাসিন্দা, ৫৯ জন রোহিঙ্গা নাগরিক।
অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৭৮ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
টেকনাফ থানার তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট থেকে ডিসেম্বর এই পর্যন্ত টেকনাফ থানায় অপহরণের মামলা হয়েছে ১৪ টি। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা অন্তত ৬৫। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩০ জনকে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, অপহৃতদের উদ্ধারে স্থানীয়দের সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে।
কক্সবাজারের জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, গহীন পাহাড়ে এই অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের সেখানে একক অভিযান চালানোর মতো সরঞ্জাম নেই। তাই আমরা যৌথ অভিযান চালানোর জন্য জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছি। আশা করছি খুব দ্রুত একটি সফল অভিযান চালাতে পারবো।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ