নেত্রকোনার গ্রামাঞ্চলগুলোতে বিদ্যুতের খুঁটি থেকে চুরি হচ্ছে পল্লী বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার। বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে মৃত্যুর ভয় না করেই ভেতর থেকে খুলে নিচ্ছে তারসহ দামী যন্ত্রাংশ। বিদ্যুত অফিসের তথ্যমতে, গত ৬ মাসে ১০০ ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটলেও একটিও চোর আটক হয়নি।
এদিকে, আমন আবাদে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে কৃষক এখন দিশেহারা। তার ওপর ইরিবোরো মৌসুমে সেচের ওপর নির্ভর করে ধানের উৎপাদন। সকলেই তাকিয়ে আছে পুলিশের দিকে। পুলিশ বলছে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ধানে উদ্বৃত্ত জেলা নেত্রকোনা। তার ওপরে শুকনো মৌসুমে ইরিবোরো ধানের আবাদ বেশি হয়। আর এই ফসলের ফলন নির্ভর করে সেচের ওপর। যে কারণে আমনের তুলনায় ইরি বোরোতে খরচ বেশি হয় কৃষকদের। বন্যায় আমনের আবাদে ক্ষতি হওয়া কৃষকদের এখন মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ। সেচ এলাকা থেকে চুরি হচ্ছে পল্লী বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার। বিদ্যুতের সংযোগ তারে ভয়ের তোয়াক্কা না করেই চোরেরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকার যন্ত্রাংশ।
এদিকে সরকারিভাবে পাওয়া সেচ যন্ত্রের জন্য ট্রান্সফরমার পুনরায় নেয়ার সুযোগ নেই। যে কারণে কৃষকদের এখন মাথায় হাত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার কেন্দুয়া, মদন, পূর্বধলা, সদর, দুর্গাপুর ও খালিয়াজুরী উপজেলায় বেশি হচ্ছে চুরি। একরাতে দু থেকে তিনটি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনাও ঘটেছে। চলতি বছরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমি। তারমধ্যে জেলায় বিএডিসির আওতায় বিদুৎচালিত সেচযন্ত্র রয়েছে ২২ হাজার ৯৭১ টি।
নেত্রকোনা পল্লী বিদুৎ সমিতির আওতায় ১২ টি উপজেলায় ১৭ হাজার সেচ রয়েছে। এরমধ্যে চলতি জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০০ টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটে। শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই ৪৬টি চুরির ঘটনা ঘটে।
এদিকে গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ১৮৪ টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ৯ লক্ষ ৮৭ হাজার ৮৫৫ টাকা। যার একটিরও আসামি ধরতে পারেনি পুলিশ।
কৃষকসহ সেচ প্রকল্প কমিটির ম্যানেজার মো নজরুল ইসলাম জানান, তাদের জমিতে এবার সেচ না দিতে পারলে অনাবাদি থাকবে অনেক জমি। চুরি যাওয়া ট্রান্সফরমারের জন্য থানায় লিখিত অভিযোগ করেও গেল ২২ দিনেও পুলিশের মুখ দেখেননি তারা।
বিদ্যুৎ এর খুঁটিতে ওঠে সাধারণ চোরেরা এসব চুরি করতে পারবে না। এক্সপার্ট ছাড়া সম্ভব না। তাই পুলিশ প্রশাসন পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে বলে জানান বিএডিসি নেত্রকোনা রিজিওনের নির্বাহী প্রকৌশলী সরোয়ার জাহান।
তিনি বলেন, একটা সরকারিভাবে দেয়ার পর চুরি হলে বা খোয়া গেলে পরবর্তীতে আর দেয়ার সুযোগ নেই। ফলে কৃষকদের কিনে নিতে হয়। এখন আড়াই তিন লাখ টাকা খরচ করে এই কৃষকদের কেনার সামর্থ্য থাকে না। হতাশায় কিনেন না। ফলে পাম্পগুলোও পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যায়।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. লুৎফর রহমান জানান, এই সেচের মৌসুমে চুরি বেড়ে যায় শিকার করে যেগুলো মামলা হচ্ছে আমার তদন্ত করছি। চুরির সাথে জড়িতদের গ্রেফতার চেষ্টা চলছে। তবে কৃষকদের সচেতন হতে হবে।
নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুতের জিএম প্রকৌশলী মাসুম আহমেদ বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে এই মৌসুমে টহল থাকে। কিন্তু সার্বক্ষণিক পাহাড়ায় থাকা যায় না। পুলিশ দু'একটা কে ধরলেই বেরিয়ে যেতো এই চোর চক্রের হোতা। এরা কোথায় নিয়ে কিভাবে যন্ত্রাংশ বিক্রি করছে তা ভাঙ্গাগারির দোকানগুলোতে তল্লাশি চালালেও মিলতে পারে। গত বছরের ১৮৪ টি চুরির ঘটনার একটিও আসামি ধরা পড়েনি। প্রতিটি চুরির ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে থানায় মামলা করতে হয়। চোর যেই হোক পুলিশকে ধরতে হবে। চোর তো চোরই। রাষ্ট্রের সম্পদ চুরি হচ্ছে। তাই পুলিশকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলায় পল্লী বিদুতের মোট গ্রাহক ৫ লক্ষ ৬৫ হাজার। বাণিজ্যিক ৪৩ হাজার। সেচ গ্রাহক ১৭ হাজার। শিল্প ৫ হাজার ৭৪৩। নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় ২৯ হাজার ৫১১ টি ট্রান্সফরমার স্থপিত রয়েছে।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ