ঢাকা, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ঈশ্বরদী মুক্ত দিবস শনিবার

প্রকাশনার সময়: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:০৩

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হলেও উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জনপদ পাবনার ঈশ্বরদী শত্রুমুক্ত হয় বিজয়ের চার দিন পর ২১ ডিসেম্বর। সেই থেকে ২১ ডিসেম্বর ঈশ্বরদী মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পর বিকালে পাকিস্তানি সেনারা ভয়ে ঈশ্বরদীস্থ বাংলাদেশ সুগারক্রপ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকে। পাকসেনাদের আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান হয়েছিল তারও চার দিন পর ২১ ডিসেম্বর।

পাকিস্তানি সেনারা যখন সুগারক্রপ ইনস্টিটিউটে অবস্থান করছিল, তখন কয়েক’শ মুক্তিযোদ্ধা এলাকাটি ঘিরে ফেলেন। মুক্তিযোদ্ধারা বাইরে থেকে বারবার খবর পাঠিয়ে পাকসেনাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। কিন্তু তারা ভয়ে রাজি হচ্ছিল না। শেষে ২১ ডিসেম্বর নাটোর থেকে পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার মঞ্জুর আহমেদ ঈশ্বরদীতে আসেন। তিনি ঈশ্বরদী এসে আত্মসমর্পণ করার ঘোষণা দেন। এরপর মিত্রবাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার রঘুবীর সিংয়ের উপস্থিতিতে যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকসেনারা।

মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ঈশ্বরদীর পাকশিতে রেলওয়ের বিভাগীয় অফিস এবং ঈশ্বরদীতে দেশের বৃহত্তম রেল জংশন ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হাওয়া সে সময় বহু সংখ্যক অবাঙালি (বিহারি) এখানে বসবাস করতো। এখানকার অনেক বাঙালিকে ধরে এনে গুলির পরিবর্তে ধারালো অস্ত্র বা তরবারি দ্বারা জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। ১১ এপ্রিল ঈশ্বরদীতে শতাধিক নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করা হয়। এদিন রাতে নতুন বাজার এলাকায় কার্তিক পালের বাড়িতেই ১১ জনকে হত্যা করা হয়। ঈশ্বরদীতে বিহারি ও রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকসেনারা নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। অনেক বাঙালিকে হত্যার পর মাটিতে পুঁতে রেখেছিল। কবরও দিতে দেয়নি।

ঈশ্বরদী মুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত পাক সেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের মূলত তিনটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তা হচ্ছে মাধপুরের যুদ্ধ, খিদিরপুরের যুদ্ধ ও জয়নগরের যুদ্ধ।

পাকশীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে বিরাজমান। মিত্র ভারতীয় বাহিনী তখন দ্রত পাক বাহিনীকে আত্মসমর্পন করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছিল। কিন্তু তারা মানেনি। ফলে পুনরায় যেন পাকসেনারা যশোর ক্যান্টমেন্টে জড়ো হওয়ার সুযোগ না পায় সেজন্য হার্ডিঞ্জ ব্রিজ বিধ্বস্ত করার লক্ষ্যে ভারতীয় বোমারু বিমান ১৪ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে উড়তে দেখা যায়।

ভারতীয় বিমান বাহিনীর বোমা নিক্ষেপে পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১২নং স্প্যানের পশ্চিম দিকের মাথা ভেঙে পদ্মার পানিতে পড়ে যায়। একটি বিশালাকার শেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় ব্রিজের পূর্ব দিকে পড়ে ছিলো। স্বাধীনতার পর ভারতীয় মিত্র বাহিনী এই শেলটি ফাটিয়ে দেয়।

যখন ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকশী ব্রিজটির ওপর বোমা নিক্ষেপ করছিলো ঠিক তখনই পাকবাহিনীর সাঁজোয়া গাড়ি ও একটি ট্যাংক ব্রিজের ওপর দিয়ে পার হচ্ছিলো। ১২ নং স্প্যানটি ভেঙে পড়ার পর ট্যাংকটি ব্রিজের ওপরই পড়ে ছিলো। কয়েকজন পাকসেনার মরদেহও ব্রিজের ভাঙা স্প্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ