অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা নির্মাণ ও পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ফলে টাঙ্গাইলের বাসাইলে কৃষি জমিতে সৃষ্টি হয়েছে জলবদ্ধতা। এতে প্রায় দুই হাজার একর জমিতে সরিষা চাষ ব্যাহত হয়েছে। শঙ্কায় রয়েছে বোরো মৌসুমের আবাদও। প্রায় দুই হাজার একর জমিতে আড়াই হাজার মেট্রিক টন ধান ও ৭৮০ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন হয়। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাসাইল পৌরসভার আন্দিরা পাড়া এলাকায় একটি কালভার্ট ছিল। দীর্ঘদিন পানি না হওয়াতে গত বছর এটি বন্ধ করে দেয়া হয়। গত বছর নতুন রাস্তা করা হয়। কালভার্টটি থাকলে পানির প্রবল স্রোতে নতুন রাস্তা ভেঙে যাবে এ কারণে বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়াও আন্দিরাপাড়া থেকে কোম্পানি বাড়ি পর্যন্ত গত বছর অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা নির্মাণ করার ফলে এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষাকালে যে পানি ঢুকেছে তা বের না হওয়ার কারণে এই জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে যদি পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে বোরো আবাদেরও শস্কা রয়েছে। এতে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাসাইল উপজেলা সদরের এসআর পাড়া, আন্দিরা পাড়া, পাল পাড়া, মাঝি পাড়া ও বালিনাসহ বেশ কিছু জলাবদ্ধতার কারণে এবার সরিষার আবাদ করতে পারেনি কৃষকরা। বোরো ধানের বীজতলাও তৈরি করতে পারেনি। সামনে বোরো আবাদেও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কৃষকদের দাবি দ্রত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
স্থানীয় কৃষকরা জানায়, এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। ফসলি মাঠে আবাদের ব্যবস্থা না থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে এলাকার প্রায় এক হাজার কৃষক। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত কোন পদক্ষেপ না দিলে কৃষকেরা বড় বিপাকে পড়বেন।
কৃষক ফজল মিয়া বলেন, অপরিকল্পিতভাবে চারদিকে রাস্তা করে ব্রিজ কালভার্ট বন্ধ করে দিয়ে এই এলাকার হাজার একর জমি রবি শস্য থেকে বঞ্চিত। বীজতলা কেউ করতে পারতেছে না। পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা রাখে নাই। যা ছিল তাও বন্ধ করে দিয়েছে। পানি নিস্কাশনের জন্য ব্যবস্থা করার দাবি জানাই।
আন্দিরা পাড়া এলাকার কৃষক বলরাম রাজবংশী বলেন, আমরা সরিষা আবাদ করতে পারি নাই। তিন ফসলি জমি সবসময় তিন ফসল উৎপাদন করে থাকি। জলবদ্ধতার কারণে আবাদ করতে পারতেছি না। বীজতলায় হাটু পানি। পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না করলে বোরো আবাদ নিয়েও শঙ্কা রয়েছি। আমন ধান, সরিষা ও বোরো ধান আবাদ করে আমাদের সংসার চলে।
তিনি আরও বলেন, সরকার দ্রুত পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করলে ধান রোপণ করতে পারবো। এটাই আমাদের দাবি। সরকার কোন ব্যবস্থা না করলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।
সুব্রত রাজবংশী বলেন, এ এলাকার বেশিরভাগ মানুষের আয়ের উৎস হচ্ছে চাষাবাদ। দীর্ঘ ধরে পানি আটকা পড়ে আছে। তাদের চাষাবাদে ব্যাঘাত ঘটতেছে। সেজন্য তাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এখানে একটি কালভার্ট বা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলে কৃষকরা চাষাবাদ করতে পারবে। না হলে তাদের মৌসুমী ফসলসহ আমন ধান, সরিষা ও বোরো ধান আবাদ করতে পারবে না।
এ ব্যাপারে বাসাইল উপজেলা কৃষি অফিসার শাহজাহান আলী বলেন, আন্দিরা পাড়া এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে এবছর চাষের আওতায় আসেনি। উপজেলা কৃষি বিভাগ ওই সমস্ত এলাকায় চাষের আওতায় আনার জন্য এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতার জন্য এই পৌরসভায় প্রায় ৮শ’ ৩০ জন কৃষককে সরিষার বীজ প্রণোদনা পূর্নবাসন হিসেবে প্রদান করেছেন। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক যেন বোরো আবাদে ক্ষতিটা কাটিয়ে উঠতে পারে প্রায় ২৫০ জন কৃষককে হাইব্রিড বীজ দেয়া হয়েছে।
বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরুখ খান বলেন, এলাকাবাসী আমার কাছে এসেছিলেন। তারা জলাবদ্ধতা নিয়ে লিখিতভাবে আবেদন করেছেন। জলাবদ্ধতা বাসাইলের দীর্ঘদিনের সমস্যা। রাস্তাসহ অন্যান্য অবকাঠামো হওয়ার কারণে জলাবদ্ধতা সমস্যা প্রকট হচ্ছে। কৃষিসহ অন্যান্য কাজে কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ