কুড়িগ্রামের উলিপুরে চিকিৎসার ব্যয়ভার মিটাতে না পেরে অবশেষে নিজের শিশু কন্যাকে ৩৫ হাজার টাকায় দত্তক দিয়েছেন মা শাহিমা বেগম। শিশুটির নাম খাদিজাতুল কোবরা (৩ দিন)।
উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের দড়িকিশোরপুর গ্রামে এমন ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, দড়িকিশোরপুর গ্রামের খিজির উদ্দিনের ছেলে দুলাল মিয়া (৪৪) এর মুখের মাড়ি পঁচনে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে চিকিৎসার উন্নতি না হওয়ায় রংপুর কসির উদ্দিন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে অপারেশন সম্পন্ন করা হয়। প্রায় এক মাস চিকিৎসার পর তার অবস্থার একটু উন্নতি হয়।
চিকিৎসার ব্যয়ে নিজের সহায় সম্বল যা ছিল সব শেষ হয়েছে। এবার কোন উপায় না পেয়ে ৩ দিন বয়সের শিশু সন্তানকে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে ৩৫ হাজার টাকায় দত্তক দিয়েছেন। ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষরের মাধ্যমে উপজেলার বাকরের হাট নিজাই খামার এলাকায় এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে শিশুটিকে তুলে দেওয়া হয়।
শিশুটির বাবা দুলাল মিয়া চায়ের দোকানে কাজ করতেন। মা শাহিমা বেগম (৩২) অন্যের বাড়িতে ও জমিতে দিনমজুরি হিসাবে কাজ করে থাকেন।
শিশুটির মা শাহিমা বেগম বলেন, স্বামীর চিকিৎসাজনিত কারণে প্রায় লক্ষাধিক টাকা ঋণ করেছি। টাকার অভাবে স্বামীর চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছিলো না, ঋণও পরিশোধ করতে পারছি না। এদিকে স্বামীর অসুস্থতার কারণে আয়-রোজগারও বন্ধ হয়েছে। ভিটেমাটি ছাড়া কিছুই নেই।
তিনি বলেন, আমার ৬ ছেলেমেয়ে সহ পরিবারের সদস্য ৮ জন। এর মধ্যে বড় মেয়ের তিন বছর আগে বিয়ে দিয়েছি। এছাড়া দোলেনা খাতুন (৮ম শ্রেণি), শাকিল মিয়া (৩য় শ্রেণি) ও রমজান আলী নূরানী মাদরাসায় পড়াশোনা করছেন। এখন বাচ্চাদের পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছি না। তাদের খাবার কিনতে পারছি না। চিকিৎসার টাকার জন্য ছোট মেয়ে খাদিজাতুল কোবরাকে এক নিঃসন্তান পরিবারের কাছে দত্তক করে দিয়েছি। বিনিময়ে তারা ৩৫ হাজার টাকা দিয়েছে। তাই চিকিৎসাও একটু এগোতে পারছি।
শাহিমা বেগম আরও বলেন, মেয়ের জন্য কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কী করব, আমার স্বামীর চিকিৎসার দরকার। তিনি অসুস্থতার জন্য কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না। তিনি সুস্থ থাকলে আমাদের সংসার চালাতে পারবেন। তাই বাধ্য হয়ে মেয়েটাকে দত্তক করে দিয়েছি।
এলাকাবাসী আলামীন ইসলাম (৩২), শাহাজামাল মিয়া (৩৩), মহুবর মিয়া (৫২), দুলু মিয়া (৪৫), নয়া (৫০), আফজাল হোসেন (৫০), জয়নাল আবেদিন (৫৬) ও গণি মিয়া (৬০) সহ আরও অনেকে জানান, দুলাল মিয়ার চিকিৎসার জন্য এলাকাবাসী চাঁদা উঠিয়ে কিছু টাকা দিয়েছেন। আরও টাকার প্রয়োজন হলে তার ছোট মেয়েকে দত্তক দেন। তার বিনিময়ে ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে চিকিৎসা চালান। এখন তার সংসার চলার মত কোন আয় রোজগার নেই। তারা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
থেতরাই ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিদ্দিকুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দিন মজুর দুলাল মিয়া অসুস্থ হলে তার অপারেশনের জন্য অনেক টাকার দরকার ছিল। কিছু টাকা এলাকাবাসী চাঁদা করে উঠিয়ে দিয়েছে। সে টাকা পর্যাপ্ত না হওয়ায় তার ছোট মেয়েকে দত্তক দিয়ে কিছু টাকা দেন। তা দিয়ে চিকিৎসা চালান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতাউর রহমান জানান, বিষয়টি আমাকে কেউ অবগত করেনি। তবে অতি দ্রুত বিষয়টি খতিয়ে দেখে আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ