কুড়িগ্রামের চিলমারীতে রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কাঁচকোল এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বাল্কহেডে ড্রেজার লাগিয়ে বালু উত্তোলন করে নদের ডান তীর ঘেষে কয়েকটি পয়েন্টের মাধ্যমে বালু বিক্রির মহোৎসব চলছে।
প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এলাকাবাসীর কথায় তোয়াক্কা না করেই চালিয়ে যাচ্ছে বালুর ব্যবসা। ফলে হুমকির মুখে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর রক্ষা প্রকল্পসহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন অবকাঠামো, আবাদি জমি এবং হাজার হাজার বসতবাড়ি। অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে চলতি মৌসুমে দুটি চর ভেঙে অন্তত ৫ শতাধিক পরিবার তাদের বাড়ি-ভিটা হারিয়েছে বলে এলাকাবাসীর দাবি। দেখে না দেখার ভান করে চলছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের উত্তর থেকে রমনা মডেল ইউনিয়নের ভরট্রগ্রাম পর্যন্ত এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে কয়েক বছর আগে। এরই মধ্যে ওই এলাকাসমূহে কয়েক দফায় ব্লক পিচিং এ ধসও দেখা দিয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে তা মেরামত করে। নদী ভাঙন রোধ এবং ডান তীর রক্ষা প্রকল্প অক্ষত রাখতে ওই এলাকায় ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
তবে নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে বর্তমানে রমনা ইউনিয়নের দক্ষিণ খরখরিয়া জামেরতল এবং রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের কাঁচকোল বাজার থেকে ফকিরেরহাট পর্যন্ত কয়েকটি পয়েন্টে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন এলাকার প্রভাবশালীরা। অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বালু ও মাটি বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এলাকাবাসী ওই এলাকায় বালু উত্তোলন নিষেধ করেও কোন কাজ হচ্ছে না। এতে একদিকে হুমকির মুখে পড়েছে ডান তীর রক্ষা প্রকল্পসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও জনবসতি।
অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নির্মিত বাধ রাস্তাটি বালু বহনকারী গাড়ীর চাকায় ভেঙে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। নিজেদের এলাকার নিশ্চিত ক্ষতি দেখেও প্রভাবশালীদের ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না অসহায় এলাকাবাসী। মুখ খুলে কোথাও কথা বললেই হুমকি দিয়ে আসছেন বলে জানান স্থানীয়রা। ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে চলতি মৌসুমে দুটি চর ভেঙে অন্তত ৫ শতাধিক পরিবার তাদের বাড়ি-ভিটা হারিয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে অবৈধভাবে বালু বিক্রির মহোৎসব চললেও অজ্ঞাত কারণে নিরব ভূমিকা পালন করছে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে রাণীগঞ্জ ইউনিয়নে গেলে উত্তোলিত বালুর দৃশ্য চোখে পড়ে। কাঁচকোল বাজার থেকে ফকিরেরহাট এলাকা পর্যন্ত ৬-৭টি এবং রমনা মডেল ইউনিয়নের দক্ষিণ খরখরিয়া জামেরতল এলাকায় একটি বালুর পয়েন্ট দেখা যায়। এসময় রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের কালিরকুড়া এলাকায় ২টি পয়েন্টের সামনে স্থানীয়দের দেয়া বাঁশের ব্যারিগেট চোখে পড়ে।
এ সময় ওই এলাকার দুলাল মিয়া, জহির আলী, দিনেশ চন্দ্র, আবু তালেব, জাফর আলী, ফিরোজ, আসাদ, মজনু, আফজাল হোসেনসহ অনেকেই বলেন, সামনের জমিগুলোতে চর সৃষ্টি হলে আমাদের এলাকায় ভাঙনের ঝুঁকি কমে যায়। এ ছাড়াও বাম তীরে সৃষ্ট চর থেকে আমরা নানান সুবিধা পেয়ে থাকি। ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে চলতি মৌসুমে দুটি চর ভেঙে অন্তত ৫ শতাধিক পরিবার বাড়িভিটা হারিয়েছে। বর্তমানে যেভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে চর তো দূরের কথা ডান তীর রক্ষা প্রকল্প যে কোন ভেঙে যেতে পারে। সারাদিন বালু পরিবহনের ফলে রাস্তার ধুলায় আমরা থাকতে পারি না। তাই রাস্তায় ব্যারিগেট দিয়ে বালু পরিবহন করা বন্ধ করা হয়েছিল, পরে পয়েন্ট মালিকরা তা খুলে দেয়।
রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল করিম, মাহফুজার রহমান মঞ্জু হাজিসহ অনেকেই এ ব্যবসার সাথে জড়িত বলে এলাকাবাসী জানান।
পাশ্ববর্তী ফাতেমা বেগম নামের এক নারী আক্ষেপ করে বলেন, আমরা বাড়িতে শান্তি করে একটু ভাত পর্যন্ত খেতে পারি না, বিছানা-পাতি একদম শেষ বালুর জন্য।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আব্দুল করিম বলেন, মঞ্জু হাজির পয়েন্টে আমার একটি শেয়ার দেয়া আছে। এর বেশি কিছু জানি না।
বিয়ষটি নিয়ে মাহফুজার রহমান মঞ্জু সাথে কথা হলে তিনি বলেন, কোন বালু উত্তোলনের ব্যবসা করি না।
এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, বালু উত্তোলনের বিষয়টি আপনার কাছে শুনলাম, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চিলমারী নৌ-ফাঁড়ি থানার উপ-পরিদর্শক মো. ফেরদৌস আলী জানান, বালু উত্তোলনের বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক বলেন, বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমি জানি না। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ