ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিনে বিনোদন কেন্দ্র আর রাতে মাদকের আখড়া বঙ্গবন্ধু হাইটেক রেলস্টেশন

প্রকাশনার সময়: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:১২

প্রায় ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে উদ্বোধন করা হয়েছিলো বঙ্গবন্ধু হাই-টেক রেলওয়ে স্টেশন। তবে ছয় বছর পার হয়ে গেলেও রেলসেবা থেকে বঞ্চিত যাত্রীরা। সুনসান নীরবতা স্টেশনে দিনের বেলায় বিনোদন কেন্দ্র আর রাতে বেলায় মাদকসহ নানান অপরাধের আখড়া।

নির্মাণশৈলী, নান্দনিকতা আর আধুনিকতায় দেশের অন্যতম কালিয়াকৈর উপজেলার গোয়ালবাথান এলাকায় বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কের পাশে এ স্টেশনটি নির্মাণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরে নির্মিত স্টেশনটিতে রয়েছে একক প্ল্যাটফর্ম, একটি লুপ লাইন ও আধুনিক সিগন্যাল ব্যবস্থার মতো সুবিধা। তবে রেল সেবা না পাওয়া মাদকের আখড়াসহ অসামাজিক কাজ চলে বলে অভিযোগ করছে এলাকাবাসী।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু হাইটেক রেলস্টেশনে স্কুল-কলেজের ড্রেস পড়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী ঘুরছেন প্লাটফর্মে, রেললাইন ধরে কয়েকজন বানাচ্ছেন টিকটক ভিডিও। কেউ কেউ আড্ডায় মেতে উঠেছেন। দেখে মনে হবে এটি কোনো বিনোদন পার্ক। ট্রেন না থাকায় একজন হকার তার পণ্য সামগ্রী নিয়ে নীরবে বসে আছেন, কখন একটি ট্রেন থামবে আর তার পণ্যগুলো বিক্রি করতে পারবেন।

স্থানীয়দের মতে, চন্দ্রা থেকে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি রেলস্টেশনের দূরত্ব মাত্র আধা কিলোমিটার। ফলে সড়ক পথের যানজট, যাত্রী ভোগান্তি ও যাত্রার সময় কমাতে এই স্টেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ, তুলনামূলক আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী হওয়ায় এক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে উত্তরবঙ্গের ২৩ জেলার মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছে। উভয়মুখী গন্তব্যে সকলের প্রথম পছন্দ রেল। বিপুল সম্ভাবনাময় স্টেশনটি দেশের উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগের একটি কমিউনিকেশন রূপান্তরিত হতে পারতো। কিন্তু শুধু ট্রেন না থামার কারণে স্টেশনটি এখন অযত্ন-অবহেলায় এক অকেজো স্থাপনায় পরিণত হয়েছে।

এদিকে, বিরাট পরিসরের স্টেশনটিতে নেই নৈশ প্রহরী, জিআরপি পুলিশ। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না থাকায় এখানে চুরি, ছিনতাই, মাদকের আখড়াসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। চুরি হয়ে যাচ্ছে স্টেশনটির বিভিন্ন মালামাল।

ঢাকা কমলাপুর স্টেশন থেকে মেয়ের বাড়ি কালিয়াকৈরে বেড়াতে আসবে বাবা আজিজ ও মা আমেনা খাতুন। এমন তথ্য জেনে মেয়ে আয়শা ছুটে আসে হাই-টেক রেলস্টেশনে। কিন্তু স্টেশন মাস্টার জানিয়ে দেন এখানে কোনো রেল থাকবে না। ক্ষিপ্ত হয়ে ফিরত যাচ্ছিলেন মেয়ে আয়শা।

এসময় তিনি নয়া শতাব্দীকে বলেন, এত কোটি টাকা ব্যয় করে এই স্টেশন কেন করা হয়েছে? যাত্রীরা রেল সেবা পাবে না, টিকিট পাবে না। এগুলো তামাশা ছাড়াই কিছু না। আমার বাবা-মা কমলাপুর থেকে আসবে কিন্তু তাদের নামতে হবে জয়দেবপুর এটা কোনো কথা?

আলম নামে স্থানীয় এক বলেন, দৃষ্টিনন্দন এ স্টেশনে কোনো ট্রেন থামে না। তাহলে এত টাকা খরচ করে বিলাসবহুল এ স্টেশন দরকার কি ছিল? সকাল হতে না হতেই এখানে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা এসে টিকটক করে, নোংরামি করে, পরিত্যক্ত স্থানে গিয়ে অসামাজিক কাজ করে। দিনের বেলায় এগুলো চলে আর সন্ধ্যা হলেই বিক্রি হয় মাদক। এই স্টেশনে যদি নিয়মিত ট্রেন থামতো তবে হয়তো এগুলো হতো না।

আনিস নামে এক বৃদ্ধ হকার বলেন, আমি পটেটো, পানি, সিগারেট বিক্রি করি। কিন্তু এখানে ট্রেন না থামায় বিক্রি নাই। যদি রেলক্রসিং সিগনাল পড়ে তবেই ট্রেন থামে। তখনই যা বিক্রি করতে পারি।

বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি রেলস্টেশনের মাস্টার রেদোয়ানা বিনতে রাজ্জাক জানান, আমাদের এই স্টেশন দিয়ে একদিনে প্রায় ৪০টি ট্রেন যাতায়াত করে। প্রথমে স্টেশন থেকে ডেমু ট্রেন চলতো পরে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ও টাঙ্গাইল কমিউটার নামক দুইটি ট্রেনের সেবা দেওয়া হতো। তবে আড়াই বছর আগে ডেমু ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। আর টাঙ্গাইল কমিউটার জয়দেবপুর এক্সিডেন্ট হয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর ৫ই আগস্টের পর সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস যে স্টেশন থেকে ছাড়তো তা পুড়িয়ে দেয় তাই এতদিন ট্রেনটি বন্ধ ছিলো। তবে ১৫ নভেম্বর থেকে আবার চালু হয়েছে। আপাতত হাই-টেক রেলস্টেশনে একটি ট্রেনের সেবা পাচ্ছে যাত্রীরা। তবে এলাকাবাসী দাবি ও যাত্রীদের চাপ থাকলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা করবে।

এ ব্যাপারে কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহাম্মেদ জানান, সেখানে অসামাজিক কাজ হয় তার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে আমরা ৬-৭দিন আগে অভিযোগ পেয়েছি যে সেখানে স্কুলপড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা ওখানে দিয়ে আসা যাওয়া করে। এটা নিয়ে ওসি সাহেবের সাথে কথা হয়েছে দিনের বেলায় তাদের পুলিশ টহল জোরদার করতে বলেছি। স্টেশনমাস্টারকে বলে দিয়েছি অযথা কেউ ঘুরাঘুরি করে বা কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাহলে আমাদেরকে দ্রুত জানায়। আর ট্রেন স্টপেজ বাড়ানোর বিষয়ে স্টেশনমাস্টারের মাধ্যমে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। তবে স্থানীয় এলাকাবাসীর চাহিদা রয়েছে এখানে যাতে রেল স্টপেজ হয় এ বিষয়টা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে রেল বিভাগকে জানিয়েছি।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ