কাক ডাকা ভোরে পাখির কিচিরমিচির। হাতে কাস্তে, কোদাল, ঢাঁকিসহ নানা রকম কাজের সামগ্রী নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে মহাসড়কের দুই ধারে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে পুরুষ ও নারী শ্রমিকরা। বাস, ট্রাক, ট্রলি, সিএনজিসহ বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে শ্রম বিক্রির উদ্যেশে রওনা হন শ্রমিকের হাটে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শীতের সকালে প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা আসে নাটোরের গুরুদাসপুরের নয়াবাজারে শ্রমিকের হাটে।
ভোরের সূর্য ওঠা থেকে শুরু হয় শ্রমিক বেচা-কেনা। তবে মহাসড়কে এভাবে শ্রমিকের হাট বসা নিয়ে স্থানীয় এবং শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। শীত মৌসুমে ধানকাটা, রসুন লাগানো, ভুট্টাচাষের ক্ষেত্রে এসময় শ্রমিকের সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে ঐতিহ্যবাহী এই শ্রমিকের হাট।
সরেজমিনে গিয়ে নয়াবাজার শ্রমিকের হাটে দেখা যায়- সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকরা বনপাড়া হাটিকুমরুল মহাসড়ক সংলগ্ন নয়াবাজার হাটে ভোর থেকে একত্রিত হন। মহাসড়কসহ রাস্তার দুই পাশে ভোর
থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত চলে শ্রমিক কেনা-বেচা। প্রতিদিন প্রায় ৫-৬ হাজার শ্রমিকরে সমাগম দেখা যায় এই হাটে। পুরুষ শ্রমিকের মজুরি ৬০০ থকে ৭০০ টাকা এবং নারী শ্রমিকের মজুরি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে কেনা-বেচা হয়। এসময় মহাসড়কে প্রায় ১ কিলোমিটার ধরে যানজট দেখা যায়। পরিকল্পিতভাবে কোনো পদক্ষেপ না নিলে যে কোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। সারাদিন কাজ করার পর সন্ধ্যায় আবার তারা বাড়ি ফিরে।আলম, করিম, জামাল, রফিকুলসহ বেশ কয়েকজন পুরুষ শ্রমিক জানান, আমরা প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস-ট্রাকে চরে কাজের খোঁজে এই নয়াবাজারের হাটে আসি। কাজ শেষে আবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরি। তবে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যে দাম তার তুলনায় আমাদের পারিশ্রমিক বাড়েনি। এ ছাড়াও হাটে শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু কাজ বাড়েনি। তাই অনেক সময় কাজ না পেয়ে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয়।
এদিকে, নারী শ্রমিক হালিমা, মনিরা, কাজলি, রুপাসহ কয়েকজন আক্ষেপ করে বলেন, মাঠে পুরুষ ও নারী শ্রমিক সমপরিমাণ কাজ করে। কিন্তু পুরুষের চেয়ে আমাদের পারিশ্রমিক খুবই কম। এ ছাড়াও আমরা প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজের আসায় এই শ্রমিকের হাটে আসি। ন্যায্য মূল্য আমরা পাই না, সঠিক মজুরি চাই।
শ্রমিক ক্রেতা হাসান, রবিন, জামালসহ অনেকে জানান, গত বছর শ্রমিকের মজুরি ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এবছর শ্রমিকের মুল্য বেড়ে হয়েছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা পযর্ন্ত। এদিকে বাজারে বীজ, সার, কীটনাশকসহ যাবতীয় জিনিসের দাম বেড়েছে। যার কারণে এ বছর ফসল উৎপাদন খরচ আগের তুলনায় অনেক গুণ বেশি লাগছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী রফিকুল ইসলাম জানান, বিগত প্রায় ১৬-১৭ বছর আগে থেকেই নয়াবাজারে শ্রমিকের হাট বসে। এই হাট বসায় আমাদের এলাকায় কৃষকরা যেমন খুব সহজেই কাজের জন্য শ্রমিক পাচ্ছে। ঠিক তেমনি শ্রমিকদেরও কর্মসংস্থান বাড়ছে। এ ছাড়াও এখানে শ্রমিকের হাটকে ঘিরে বিভিন্ন রকমের দোকান-পাট, হোটেল স্থাপিত হয়েছে। বেড়েছে এলাকার বেকার মানুষের কর্মসংস্থানও।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, উপজেলার নয়াবাজারে শ্রমিক হাট বসায় কৃষকরা সহজেই পাচ্ছেন শ্রমিক। এতে অনেকাংশে সহজতর হয়েছে এখানকার কৃষিকাজ। শুধুই তাই নয়, উপজেলাজুড়ে বেড়েছে সবধরনের ফসল উৎপাদন।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ