ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

হাসিনাসহ ১৩০ জনের নামে মামলা : ফিরে এলেন স্বামী

প্রকাশনার সময়: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৯

জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের নামে হত্যা মামলা। মামলা থেকে আসামির নাম বাদ দিতে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্যের প্রায় তিনমাস পর বেরিয়ে এলো স্বামী। এমন ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে আশুলিয়ায়।

আজ বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে আলামিনকে খুঁজে পাওয়া বিষয়টি নিশ্চত করেছন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক।

গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় স্বামীর সঙ্গে সিলেট ছিলেন কুলসুম। পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীকে সিলেট রেখে একাই আশুলিয়ায় চলে আসে স্ত্রী। তবে স্বামীকে সিলেট রেখে আসলেও আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে আন্দোলনে নিহত চারটি মরদেহর মধ্যে অজ্ঞাত একটি মরদেহ নিজের স্বামীর বলে দাবী করে কুলসুম। তার স্বামী আলামিন ছাত্র জনতার আন্দোলনে বাইপাইল গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে এমন দাবি করে ১৩০ জনকে আসামী করে আশুলিয়া থানায় দায়ের করেন হত্যা মামলা। এমন ছলচাতুরী মামলায় আসামি করা হয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাসহ নিরিহ মানুষকে। ফলে মৃত আলামিন প্রকাশ্যে আসার পর শুরু হয়েছে তোলপাড়।

জানা যায়, ৫ আগস্ট আশুলিয়ার নারি ও শিশু হাসপাতালে আসা চারটি মরদেহের মধ্যে একটির পরিচয় সনাক্ত না হওয়ায় পরদিন তাকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে দাফন করা হয় স্থানীয় গাজীরদরগা কবরস্থানে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিহতের ছবি প্রকাশ করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অজ্ঞাত ওই ব্যক্তির মরদেহকে নিজের স্বামী দাবী করে মামলা করেন কুলসুম, যা আশুলিয়া থানায় নথিভুক্ত হয় ৮ নভেম্বর।

মামলায় সাক্ষী করা হয়, জামগড়া এলাকার মৃত সেকান্দার আলীর ছেলে মোখলেছুর রহমান, আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুন অর রশিদ, একই হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. দেলোয়ার হোসেন ও হাসপাতাল মসজিদের পেশ ইমামকে।

আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, গত ৫ আগস্ট আমাদের হাসপাতালে চারটি মরদেহ আসে। এরমধ্যে একটি মরদেহের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় স্থানিয় কবরস্থান দাফন করা হয়। এরপর থেকে ওই মরদেহের স্বজন বা কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। মামলার সাক্ষী কীভাবে কারা করলো আমি কিছু জানি না।

আলামিন মিয়া নয়া শতাব্দীকে বলেন, আন্দোলনের সময় আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে সিলেটেই ছিলাম। আন্দোলনের পর আমার সঙ্গে ঝগড়া করে সে চলে আসে। গত ৫-৬ দিন আগে আশুলিয়া থেকে একজন ফোন করে বলে, আমি নাকি ৫ আগস্ট নিহত হয়েছি! তার কাছ থেকেই প্রথম শোনলাম আমার স্ত্রী আমাকে মৃত দাবি করে থানায় মামলা করেছে। যে ফোন দিয়েছিল সেও নাকি আসামি। একথা শুনে আমি ভয়ে পালিয়েছিলাম। পড়ে সিলেটের সুরমা থানায় সাধারণ ডাইরি করি।

আলাামিন আরও বলেন, আমাকে মৃত দেখিয়ে নিরীহ মানুষকে আসামি করে আবার সেই মামলা থেকে নাম বাদ দিতে আমার স্ত্রী তাদের কাছ থেকে নাকি টাকাও নিয়েছে। এর সাথে অন্য কোনো চক্র জড়িত থাকতে পারে। এসময় তিনি সুষ্ঠু তদন্ত করে স্ত্রী সহ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

আলামিন (২২) লালমনিরহাট জেলা সদরের বাগিচা খাতা পাড়ার নূর নবীর ছেলে। কুলসুমের মানিকগঞ্জ জেলা ঘিওর থানা শিংজুরি গ্রামের আব্দুল খালেকের মেয়ে।

নূর নবী বলেন, আমার বেটার বৌ যে কাজ করেছে এতে আমাদের ইজ্জত আর রইল না। কার কথায় একাজ করল আমরা কিছুই জানি না।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আলামিনকে থানায় আনা হয়েছে। তার স্ত্রীর ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। মামলার বিষয়টি তদন্ত পূর্বক আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ