সুনামগঞ্জে গত এক মাস ধরে দেশের প্রধান খাদ্যশস্য চালের মূল্য ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। আতপ চালের পাশাপাশি সিদ্ধ চাল, মোটা জাতের চালের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন দিনমজুরসহ নিম্নআয়ের মানুষ। নির্দিষ্ট আয় দিয়ে বাড়তি দামে চাল কিনে খেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
ভোক্তারা বলছেন, বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও কারসাজি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল মালিকরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন আমাদেরও বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে, তাই দাম বেশি। ৫০ কেজির বস্তার চালের দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে মিল মালিকরা বলছেন, ধানের দাম বেড়েছে, সংগত কারণেই বাজারে বেড়েছে চালের দাম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুনামগঞ্জের পৌর শহরের চালের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার জেল রোড ও তৎসংলগ্ন নতুন বাজার গলিতে চালের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। চালের দাম বৃদ্ধির জন্য খুচরা বিক্রেতারা দায়ী করছেন পাইকারদের, আর পাইকাররা বলছেন, মিল পর্যায়ে দাম বেড়েছে।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের জেল রোড এলাকার সবচেয়ে বড় চালের দোকান সুধাংশু অ্যান্ড সন্স এর মালিক তপু পাল বলেন, গত আগস্ট মাসের শেষের দিকে মালা সিদ্ধ চাল প্রতি বস্তা ২৬৯০ টাকা করে কিনতে পেরেছি। এই চাল অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে অর্থাৎ ১০ দিনের মধ্যেই প্রতি বস্তায় প্রায় ১৩৫ টাকা বেড়েছে। অক্টোবরের শেষের দিকে একই চালের বস্তা ২৯০০ টাকা হয়েছে।
এ ছাড়াও গবিবের চাল বলে খ্যাত মোটা সিদ্ধ চাল ২৩০০ টাকা প্রতি বস্তা ছিল। এই চাল এক মাসের ব্যবধানে প্রতি বস্তায় ৩০ টাকা বেড়ে ২৩৩০ টাকা হয়েছে।
এর দুই দিন পরই মোটা সিদ্ধ চাল প্রতি বস্তা ২৩৫০ টাকায় কিনেছি। ধাপে ধাপে দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়টি একমাত্র মিল মালিকদের সাথে কথা বললে জানতে পারবেন। আমরা এসব জানিনা।
একই বাজারের মেসার্স রিষান ট্টেডার্স, ত্রিপূর্না ট্টেডার্স, শাহজালাল চাউলের আড়তসহ বেশ কয়টি পাইকারি ব্যবসায়ীর দোকানে মূল্য তালিকা থেকে জানা যায়, প্রতি কেজি মুক্তা মোটা চাল ৪৫ টাকা, মালা পুরান ৫৫ টাকা, মালা নতুন ৫০ টাকা, আঠাশ পুরান ৫৮/৬২ টাকা, পাইজম সিদ্ধ ৫৮ টাকা, রাতা ৬০/৬৮ টাকা, টেপি ৬০/৬৫ টাকা, মোটা সিদ্ধ ৪৫ টাকা, মালা সিদ্ধ ৫৫/৬৩ টাকা, মালা আতপ ৫৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চাল কিনতে আসা বাবলু মিয়া ২৫ কেজি ওজনের আঠাশ আতপ চাল একবস্তা ১৪৫০ টাকায় কিনেছেন
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০/২৫ দিন পরপর এক বস্তা ২৮ জাতের চাল কিনি। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে এক বস্তা কিনেছি ১৩৫০ টাকায়। আজকে ১৪৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। তবে মান ভেদে আঠাশ আতপ চাল প্রতি বস্তার দাম (২৫ কেজি বস্তা) আরও বেশি চায় বিক্রেতারা। মিল ও পাইকারি পর্যায়ে তদারকি করলে কমতে পারে চালের দাম।
আমআড়ী বাজারের মেসার্স লোকনাথ অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী বকুল রায় বলেন, ৫০ কেজি ওজনের আটাশ আতপ চাউল পুরান বিক্রি হচ্ছে ২৮৫০ টাকা, নতুন আটাশ ২৫০০ টাকা দরে, ২৯ জাতের পুরান চাল প্রতি ২৭৫০ টাকা করে। একমাস আগে আটাশ আতপ চাল পুরান বিক্রি হচ্ছিল ২৭০০ থেকে ২৮০০ টাকায়।
ধাপে ধাপে দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ধানের দাম বাড়লে আমরা চালের দামটা বাড়িয়ে বিক্রি করি।তাছাড়া আমরা মেমো সংগ্রহ করে রাখি। আমাদের মিলারদের নাম ভাভিয়ে কেউ কেউ বেশি দামে বিক্রি করে থাকে। অনেকের লাইসেন্স নেই। তারা চাল সংগ্রহ করে আমাদের মিলারদের নাম ভাঙিয়ে বিক্রি করে। ক্যাশ মেমো চেক করলেই সত্যতা পাওয়া যাবে। আমরা প্রত্যেক পাইকারী ব্যবসায়ীদের ক্যাশ মেমো দিয়ে থাকি।
জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আল আমিন বলেন,আমরা গতকাল বাজার মনিটরিং করেছি। যদি বাইরে থেকে চাল আমদানি করে থাকে এবং সেখানেই যদি দামটা বেশি হয় তাহলে হয়তো তারাও বেশি দাম রাখবে। তবে যদি সিন্ডিকেট করে অতি মুনাফার আশায় চাউল মজুদ রেখে বেশি দামে বিক্রি করতে চায়, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, আমরা বাজার মনিটরিং করছি।গতকাল শহরে অভিযান পরিচালনা করেছি। মূল্য তালিকা সেঁটে না রাখার কারণে এক ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছি। আজকে দিরাই উপজেলায় মনিটরিং করছি। চালের মজুদ রেখে বেশি দামে বিক্রি করতে চাইলে আমরা মিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
তিনি আরও বলেন, আমরা সার্বিক পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ্য রাখতে প্রতিটি উপজেলা খাদ্য অফিসারদের বলে দিয়েছি, মিল এবং বাজার মনিটরিং করছি। অনিয়ম ও মজুতের প্রমাণ পাওয়া গেলেই আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ