বরিশাল জেলার চারদিক ঘেরা নদীমাতৃক একমাত্র দ্বীপ উপজেলা মেহেন্দিগঞ্জ। চারদিকে নদী বেষ্টিত এই উপজেলা ১টি পৌরসভা ও ১৬ ইউনিয়ন নিয়ে উপজেলা গঠিত।
উপজেলার উত্তরে রয়েছে মেঘনা নদীর ওপারে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলা, দক্ষিণে বরিশাল জেলা সদর উপজেলা, পূর্বে ভোলা জেলার সদর উপজেলা ও পশ্চিমে হিজলা ও মুলাদী উপজেলা। মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন জনপদ।
বরিশাল বিভাগের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র এই জনপদটি এক সময় ঘাট পাতারহাট নামে ব্যাপক পরিচিত ছিল। এই উপজেলায় আছে জমিদার বাড়ি, তাজমহল সজ্জিত মসজিদ সহ অনেক ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা মরহুম মহিউদ্দিন আহাম্মেদ, ২১শের গানের রচয়িতা আব্দুল গাফফার চৌধুরী, কবি আসাদ চৌধুরী, বিচারপতি আব্দুর রহমান চৌধুরীর মত বিশ্ব জননন্দিত ও খ্যাতিমান বরেণ্য ব্যক্তিদের জন্ম এই উপজেলায়।
প্রতি বছর এই উপজেলার প্রায় সবগুলো ইউনিয়নই নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছে। ফলে নদী ভাঙনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এখানকার ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের জনজীবন।
প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্বলিত বিভিন্ন স্থাপনা। ইতিপূর্বে উলানিয়া মেঘনা নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ শুরু হওয়ার ফলে ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ি, উলানিয়া বাজার, উলানিয়া করনেশন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহ ভাঙনকোলে থাকা কয়েকটি গ্রাম রক্ষা পেয়েছে।
অপরদিকে কাজের ধীরগতি ও বর্ষা মৌসুমে নদী উত্তাল থাকায় আতংক দেখা দিয়েছে নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাস করা মানুষজনের মাঝে। এছাড়া রাক্ষসী মেঘনা, গজারিয়া, মাসকাটা, কালাবদর, তেতুলিয়া ও ইলিশা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এতে করে সবচেয়ে বেশী নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মেহেন্দিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রাকুন্দি, সাদেকপুর, চরগোপালপুর, জাঙ্গালিয়া ও মেহেন্দিগঞ্জের সীমান্তবর্তী হিজলা ধূলখোলা ইউনিয়নের আলীগঞ্জ বাজার সহ বিভিন্ন এলাকা। ইতিমধ্যে হিজলা পিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। যেকোন সময় বিলীন হতে পারে ঐতিহ্যবাহী আলীগঞ্জ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা।
এছাড়াও নদী ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে মেহেন্দিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাদেকপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাদেকপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও রাকুন্দি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের লেঙগুটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এসকল এলাকায় প্রতিদিনই নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে কোন না কোন বসত বাড়ি, কাঁচা-পাকা রাস্তা ঘাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমি।
নদী ভাঙনে ইতিপূর্বে বিলীন হয়ে গেছে একাধিক গ্রামও। এসকল এলাকায় ইতিপূর্বে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে ভাঙন প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
এছাড়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের লেঙগুটিয়া, শিন্নিরচর, চরশেফালী, ভাষানচর ইউনিয়নের বাগরজা, লঞ্চঘাট এলাকা, চরগোপালপুর ইউনিয়নের আমীরগঞ্জ রাস্তার মাথা, গাজীরচর, গোবিন্দপুর ইউনিয়নের তেতুলিয়া, আলীমাবাদ ইউনিয়নের মাঝকাজী, গাগুরিয়া, শ্রীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর বাজার, বগিরচর এবং উলানিয়া, চানপুর, চর এককরিয়া ও দড়িরচর খাজুরিয়া ইউনিয়নে নদী ভাঙন প্রতিদিনই অব্যাহত আছে। নদী ভাঙনের ফলে ইতিমধ্যে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
নদী ভাঙন কবলিত এলাকার সাধারণ মানুষজন ভাঙন আতংকে বসত বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে আবার সড়কের পাশেই খড়কুটো দিয়ে ছাপরা ঘর বানিয়ে মানবেতর ভাবে জীবন যাপন করছে।
প্রতিনিয়ত নদী ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতিমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ’র ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ভাঙন রোধকল্পে বাংলাদেশ সরকারের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামীম এমপি ভাঙন কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা জানান, নদী ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনই কোন কার্যকরী ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই হারিয়ে যেতে পারে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন হাট-বাজার, মাধ্যমিক-প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, বসত বাড়ি, ফসিল জমি সহ সরকারী-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
নদী ভাঙন প্রতিরোধ এবং নদীর তীরবর্তী মানুষের জীবনমান উন্নয়নে দ্রুততময়ের মধ্যে একটি কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানান এলাকাবাসী।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ