ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

২০০ নারীর জীবনের মোড় ঘুরিয়েছেন হাসনা বেগম

প্রকাশনার সময়: ০৪ অক্টোবর ২০২১, ০৯:০৫ | আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২১, ০৯:১৩

হাসনা বেগম একজন সফল নারী। জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন আরো ২০০ নারীর। কিন্তু তার শুরুটা ছিল খুবই অল্প পুঁজি নিয়ে। কঠোর পরিশ্রম, স্বপ্নের বাস্তবায়নে লেগে থাকা এসবই তার সম্বল। বর্তমানে তিনি নিজেই গড়ে তুলেছেন পোশাক তৈরির কারখানা। যেখানে নারীরা কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। হাসনা বেগম একসময় নিজে ৪৫০ টাকার বেতনে অন্যের কারখানায় চাকরি করে সফলতার স্বপ্ন দেখেন। তারপর সেই পুঁজি নিয়েই স্বপ্ন পূরণে জয়ী হয়েছেন। নিজেই দিয়েছেন কারখানা রাজশাহী নগরীর বিসিক এলাকায়। প্রায় ২০০ জন নারী শ্রমিককে প্রশিক্ষণ দিয়ে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন হাসনা বেগম। ফলে তাদের দক্ষ হাতের নৈপুণ্যে গড়ে উঠছে সিল্ক শাড়ি, থ্রিপিস, পাঞ্জাবি।

জানতে চাইলে নয়া শতাব্দীর কাছে তুলে ধরেন স্বপ্ন পূরণের চিত্র। হাসনা বেগম বলেন, “শ্রমিক থেকে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখি। কাজ করতাম অন্যের কারখানায়। বেতন পেতাম ৪৫০ টাকা। তা দিয়ে সংসার সামলানোর পাশাপাশি কিছু একটা করতে হবে ভাবনা ছিল। নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে স্বপ্নপূরণের পিছু লেগে থাকি। এরপর ১৯৯০ সালে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিই। নিজেকে আরো দক্ষ করে তুলি। তারপর স্বামীর সহযোগিতায় ৬০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে কারখানা শুরু করি। প্রথমে চারটি হাত-তাঁত নিজেই শুরু। এরপর স্থানীয় বাণিজ্য মেলায় স্টল দেই। সেখানে আমাদের পণ্যের বেশ চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। তারপর থেকে উৎসাহ আরো বেড়ে যায়। রাজশাহী শহরে আমার স্বামীর একখ- জমি ছিল। এই জমি কাজে লাগানোর মতো সামর্থ্য ছিল না আমাদের। তাই সাহস করে জমিটা বিক্রি করে চারটি যন্ত্রচালিত তাঁত কিনি। তার পর থেকে বাড়তে থাকে ব্যবসার পরিধি”।

হাসনা বেগমের কারখানায় কি ধরণের পোশাক তৈরি হয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার কারখানায় মূলত থ্রিপিস, পাঞ্জাবি, সিল্ক শাড়ি বেশি তৈরি হয়। এছাড়া শাড়িতে হাতের কাজ, কুশনকভার ও কাপড়ের বিভিন্ন শোপিসও তৈরি করা হয়। নিজের ফেব্রিকস নামের কারখানার পণ্য হাসনা বেগম দেশে ও বিদেশের মেলায় প্রর্শনীর মাধ্যমে বিক্রি করেন।

হাসনা বেগমের বাড়ি রাজশাহী নগরের বিসিক এলাকায়। তার স্বামীর নাম রেজাউল আহসান। চার সন্তানের জননী তিনি। বড় ছেলেকে স্নাতক ডিগ্রী সম্পন্ন করিয়েছেন। দুই মেয়েকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রী দিয়েছেন। ছোট ছেলে এখনো অধ্যয়নরত। দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা হাসনা বেগম বিয়ে হয় ১৯৮৫ সালে। এর আগে তিনি রাজশাহী বিসিক এলাকায় অন্যের কারখানায় মাসে ৪৫০ টাকা বেতনে শ্রমিকের কাজ করতেন। বিয়ের পরে স্বামীর সংসারে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে স্বপ্ন দেখেন জয়ী হওয়ার। পরে নিজেই গড়ে তোলেন কারখানা।

হাসনা বেগম বলেন, ২০০৬ সালে উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের মাধ্যমে কলকাতার বাণিজ্য মেলায় অংশ নিয়েছিলেন। তবে সেখানে আশানুরূপ সাড়া পাননি। কিন্তু এতে ভেঙ্গে পড়েননি তিনি। দেশে ফিরে বিপুল উৎসাহ নিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোতে ‘এআরসি’ নামে একটি সমিতির নিবন্ধন করেন। এরপর থেকে নিজের কারখানায় তৈরি পণ্য নিয়ে বর্তমানে প্রতিবছর বিদেশের বিভিন্ন মেলায় অংশ নিচ্ছেন হাসনা বেগম। নেপাল ও ভারতের কলকাতা, আসাম ও গোহাটিসহ বিভিন্ন রাজ্যে বাণিজ্য মেলায় তাঁর পণ্যের পসরা সাজিয়ে তুলেন। নিজেই একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালু করেছেন। সেখানে নানা রকম হাতের কাজের প্রশিক্ষণ দেন তিনি প্রত্যন্ত এলাকার হতদরিদ্র নারীদের। এই প্রশিক্ষণকেন্দ্র থেকে প্রতিবছর ১৩০ জন নারী হাতের কাজের প্রশিক্ষণ নেন বলে জানান হাসনা বেগম। এই প্রশিক্ষিত নারীদের তিনি সুতা ও কাপড় সরবরাহ করেন। তাঁরা নিজ নিজ বাড়িতে বসে শাড়ি, কুশনকভারে কাজ করেন ও বিভিন্ন ধরনের শোপিস বানিয়ে হাসনা বেগমকে সরবরাহ করেন। তাঁর কারখানায় ১৫ জন নারী কর্মী হিসেবে কাজ করেন। আরও ৪০ জন নারী নিজ বাড়িতে বসে কাজ করে তাঁকে পোশাক সরবরাহ করেন। এভাবে কমপক্ষে ২০০ জন নারীকে স্বাবলম্বী করেছেন হাসনা বেগম।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ