ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই তুলে নিয়ে ভয়াবহ নির্যাতন করতেন পৌর মেয়র ছানু

প্রকাশনার সময়: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৫২

জোরপূর্বক ভূমি দখলের প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করায় জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ছানু সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে শিক্ষানবিশ আইনজীবূ নুর হোসেন আবাহনীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় হত্যার উদ্দ্যেশে নির্যাতন করেন। শুধু তাই নয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন।

এসব ঘটনার প্রতিবাদে সন্ত্রাসীদের গডফাদার, ভূমিদস্যু সাবেক মেয়রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী ও তার পরিবার।

শনিবার (২ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে পৌর শহরের শহীদ হারুন সড়ক এলাকায় প্রেসক্লাব জামালপুরে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

ভুক্তভোগী নূর হোসেন আবাহনী পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও শহরের পাথালিয়া গুয়াবাড়িয়া এলাকার আব্দুর রশিদের ছেলে।

ভুক্তভোগী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুর হোসেন আবাহনী বলেন, সেইদিন ছিল ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ ৬ রমজান। জোড়পূর্বক জমি দখলের প্রতিবাদে ও মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ছানুকে সর্তক করার উদ্দ্যেশে আমি ফেসবুকে লাইভ দেয়। লাইভটি দেখে মেয়র লোক দিয়ে আমাকে পৌরসভায় ডেকে নিয়ে যায়। পরে মেয়র হাত ধরেন এবং পিস্তল ঠেকিয়ে গাড়িতে তুলেন। প্রথমেই মেয়র আমার নাকে একটি ঘুষি মারেন। এতে নাক দিয়ে রক্ত বের হয়ে আমার সাদা পাঞ্জাবি লাল হয়ে যায়। পরে মেয়রের বাড়ির পাশে একটি ঘরে (টর্চারসেল) নিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে নির্যাতন করেন। ইফতারের সময় হলে আমাকে শুধু পানি খেতে দেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে মেয়রের বড় ভাই আনোয়ার হোসেন আনু ও মেয়রের সন্ত্রাসী বাহিনীর তাজুসহ কয়েকজন আমাকে ইটের ভাটায় নিয়ে পুনরায় নির্মমভাবে মারধর ও মাথা ন্যাড়া করে দেয়। এ সময় আমার ভ্রু ফেলে দেওয়া হয়। লোহার রড, হকি স্টিক ও বাঁশের গুড়ালি দিয়ে ৫-৬শ পিটুনি দেয়। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-পতঙ্গে মারধর করা হয়।

এক পর্যায়ে জবাই করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তখন আমি পানি খেতে চাইলে আমাকে পানিও দেওয়া হয়নি। তখন শুধু আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার বলছিলাম। এ সময় হঠাৎ করে মেয়রের সন্ত্রাসী তাজুর ফোনে কল আসে। তখন আমাকে জবাই না করে মেয়রের মামা হাসানের বাড়িতে নেওয়া হয়। সেখানে আমার চার হাত-পা ভাঙছে কি-না তা দেখা হয়। সেখানেও মারধর করা হয়। পরে পুলিশ ডেকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সে সময় পুলিশ আমার অবস্থা দেখে নিতে চায়নি। জোরপূর্বক তাদের কাছে দেওয়া হয়। পরে পুলিশের মাধ্যমে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। উল্টো আমার নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

ভুক্তভোগীর বাবা আব্দুর রশিদ বলেন, ‘মেয়র পৌরসভায় আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে যায়। বাড়িতে নিয়ে মারধর করেছে। পরে মেয়রের বাড়িতে গেলে ছোট ভাতিজাকেও মারধর করে। আমাদের বাড়ি থেকে ঘাড় ধরে বের করে দেয়। হাসপাতালে চিকিৎসা না করে তাকে জেলখানাতে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে মির্জা আজমের বাসায় নিয়ে মীমাংসা করায়। কিন্তু আমার ছেলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়েছিল। সেই মামলায় ছেলেকে জামিনে জেলখানা থেকে বের করেন। কিন্তু পরে মেয়র মামলায় না-রাজি দেয়। মির্জা আজম মূমাংস করে দেওয়ার পরেও মামলাটি মেয়র উত্তোলন না করে ছেলেকে হয়রানি করছে। আমি এই সন্ত্রাসী মেয়রের বিচার ও আমার ছেলের বিরুদ্ধে দেওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই।’

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ