ঢাকা, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১, ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

নীলফামারীতে ঘন কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা

প্রকাশনার সময়: ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:০৭

প্রকৃতিতে শুরু হয়েছে ঋতুবদলের আয়োজন। শরৎ পেরিয়ে নামছে হেমন্ত, চলছে কার্তিক মাস। এরপর শীতকাল কিন্তু এখনই প্রকৃতি জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। এরই মধ্যে বইতে শুরু করেছে হিম বাতাস, সেই সঙ্গে হালকা শীতের ছোঁয়া। অনুভব করছে কুয়াশা আচ্ছন্ন হয়ে থাকা ভোরবেলা।

নীলফামারীর জলঢাকায় সারাদিন গরম থাকলেও গভীর রাত থেকে শুরু হয়েছে হালকা হিমেল হাওয়া, সঙ্গে নামছে হালকা কুয়াশা। শীতকে ঘিরে সক্রিয় হচ্ছে পৌর শহরের বিভিন্ন পিঠাপুলির দোকানগুলো। হেমন্তের পর অগ্রহায়ণ পেরিয়ে তবেই আসবে শীতকাল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রকৃতির বিরূপ প্রভাব ও জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে হেমন্তের শুরুতেই পাওয়া যাচ্ছে শীতের আগাম বার্তা।

আজ বুধবার (২৩ অক্টোবর) ভোর ৬টার দিকে জলঢাকা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কুয়াশার কারণে প্রকৃতিতে ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশ যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়েও চলাচল করছে।

গ্রামবাংলার মানুষের জীবনে হেমন্ত মানেই নবান্ন উৎসবের আমেজ। হেমন্ত এলেই এ জনপদের মানুষের মাঝে আনন্দ বিরাজ করে। হেমন্তের আগমনে গ্রামের মেঠোপথে সকালে হাঠলেই পা ভিজে যায় শিশির কণাতে। হেমন্তের আগমনে মাঠে মাঠে হেসে উঠে সোনালি ধান। পাকাধানের ম ম সুমিষ্ট সুভাসে মুখরিত চারিপাশ। আর কয়দিন পরেই কৃষকের ঘরে ঘরে উঠবে সোনালি রোপা ধান আর এ নতুন ধানের চাল থেকে বাংলার গৃহবধুরা গুরা তৈরি করে নতুন খেজুরের গুড় দিয়ে তৈরি করবে হরেক রকমের বাঙালি পিঠা-পুলি।

কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসজুড়েই বাংলাদেশে হেমন্তের বিস্তৃতি। শরতের কাশফুল মাটিতে নুইয়ে পড়ার পরপরই বাংলার রূপবৈচিত্র্যে হাজির হয় হেমন্ত।বসন্তের মতো তার নিজস্ব কোনো বর্ণ গন্ধ কিংবা গরিমা নেই। হেমন্ত মৌন শীতল ও অন্তর্মুখী। হেমন্তে ফোঁটা শিউলী, কামিনী, গন্ধরাজ, মল্লিকা, দেবকাঞ্চন, হিমঝুরি, রাজ অশোক প্রভৃতি ফুলের সৌরভ বাঙ্গালির প্রাণে সঞ্চার করে নতুন আমেজ। ভোরের শিশির ভেজা ঘাসে ছড়িয়ে থাকা মুক্ত দানা আর ফসলের সোনালি সমুদ্র সবমিলিয়ে যেন পূর্ণতা পায় প্রকৃতি। হেমন্তের সকালে শিউলীর সৌরভে বাঙালির প্রাণে আসে উৎসবের আমেজ।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকার স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিন ধরে শেষরাতে কুয়াশা পড়েছে সেই সঙ্গে বেড়েছে শীতল বাতাস। ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত হালকা ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। তবে কুয়াশার স্থায়িত্ব বেশিক্ষণ থাকছে না। সূর্য উঠলেই কুয়াশা কেটে যাচ্ছে।উপজেলার কৈমারী সুনগর এলাকার বাসিন্দা আজাইফুল আমিন জিতু, রবিউল হক রবি, উপজেলার কৈমারী দিঘীরপাড় এলাকার বাসিন্দা ফরিদা বেগম, মতিয়ার রহমান বিএসসি, নিয়মিতই ফজরের নামাজ পড়ে হাঁটতে বের হন তারা। আজ বুধবার (২৩ অক্টোবর) সকালে হাঁটতে এসে বলেন, কয়েকদিন ধরেই ভোরে বেশ কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। এমনকি দিনের বেলা সূর্যের তাপমাত্রাও কমেছে। বোঝা যাচ্ছে শীত আসছে।

এক সময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। সম্রাট আকবর অগ্রহায়ণ মাসকেই বছরের প্রথম মাস বা খাজনা তোলার মাস ঘোষণা দিয়েছিলেন। কারণ, ধান উৎপাদনের ঋতু হলো এ হেমন্ত। হেমন্তের প্রথম মাস কার্তিকে ধানে পাক ধরে। কার্তিকের শেষ দিকে গ্রামের মাঠে মাঠে ধান কাটার ধুম পড়ে যায়। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে পাকা ধানের গন্ধে ম ম গন্ধ। জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশের ষড়ঋতুতে। ঋতুর উপস্থিতিতে ঘটছে তারতম্য।

এবারও আগাম শীতের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। শীতে শাকসবজির বেশি আবাদ হয়। নতুন ধান কাটা শুরু হয়। শীত নামার আগেই পিঠাপুলি বিক্রি শুরু হয়েছে। নতুন ধান আর নতুন গুড়ের পিঠা বেশ মজা।

জলঢাকা উপজেলা কৃষি অফিসার সুমন আহমেদ বলেন, ‘নীলফামারী উত্তরের শীতপ্রধান জেলা। এখানে শীত আগে আসে, পরে যায়। সকালে ও রাতে আমরা শীতের ছোঁয়া পাচ্ছি। তাপমাত্রারও কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে।’ এক সপ্তাহে জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৭ থেকে ৩০ এবং সর্বনিম্ন ২২ থেকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ