মুরগির ডিমের দাম নিয়ে যখন বাজার টালমাটাল, ঠিক একই সময়ে পিঁপড়ার ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ টাকা কেজি দরে। ব্যাপক চাহিদা থাকায় পিঁপড়ার ডিমের জোগান দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন এ পেশার লোকেরা।
তাই টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার শাল গজারির বনে-বনে ঘুরে সবুজ পাতার আড়ালে থাকা লাল পিঁপড়ার বাসা খোঁজতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। এ যেন বনের গভীরে গুপ্তধন খোঁজে বের করা।
এদিকে অতিরিক্ত পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহের কারণে বনের পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন পরিবেশ সচেতন ব্যক্তিরা।
শৌখিন মৎস্য শিকারি ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বড়শি দিয়ে মাছ শিকারের জন্য খুব প্রয়োজনীয় এক জিনিস এই লাল পিঁপড়ার ডিম। শৌখিন মৎস্য শিকারিদের চাহিদা মেটাতে বনের গাছগাছালির ডাল-পালা ও পাতা থেকে সারা বছরই এসব ডিম সংগ্রহ করা হয়। ডিমগুলো বিক্রি করে যা উপার্জন হয়, তা দিয়ে চলে এক শ্রেণির মানুষের সংসার।
সখীপুর উপজেলায় প্রাকৃতিকভাবে অনেক শাল-গজারি বন রয়েছে। উঁচু-উঁচু গজারি গাছের ডালপালা থেকে লম্বা বাঁশ ও টুকরির মাধ্যমে ভাঙা হয় পিঁপড়ার বাসা। ওই সব বাসা থেকে সংগ্রহ করা হয় লাল পিঁপড়ার সাদা ডিম। এই ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজটি করতে হয় খুব সতর্কতার সঙ্গে। বাসা থেকে সংগৃহীত ডিমগুলো প্রথমে পিঁপড়াসহ রাখা হয় বাঁশের এক ধরনের টুকরিতে। দিন শেষে টেবিলের ওপর জাল ও কাপড় দিয়ে ডিম থেকে পিঁপড়া আলাদা করা হয়।
শনিবার (১৯মঅক্টোবর) বনের মধ্যে দেখা হয় পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহকারী আবু তাহেরের (৪০) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার কাহালগাও গ্রাম থেকে এসেছি। আমরা ১২ জন লোক প্রতিদিন এই অঞ্চলে এসে পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করি। বড় আকারের একটি বাসা থেকে ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম পরিমাণ ডিম পাওয়া যায়। এভাবে প্রতিজনে সারা দিনে সর্বোচ্চ এক-দেড় কেজি করে ডিম সংগ্রহ করতে পারে। আর এক কেজি পিঁপড়ার ডিম পাইকারদের ১২ শ থেকে ১৫ শ টাকা বিক্রি করি।
বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা শহিদ হাসান বলেন, ‘পাইকারদের কাছ থেকে ২৫০ গ্রাম ডিম কিনতে হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দিয়ে। সে হিসেবে প্রতি কেজি ডিমের দাম পড়ে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা।’
এদিকে, এভাবে পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করলে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয় কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ের সাবেক সহকারী অধ্যাপক ও বর্তমানে হাতিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রহিজ উদ্দিন বলেন, ‘বনে নানান প্রজাতির পাখিরা পিঁপড়া ও কীটপতঙ্গ খেয়ে বেঁচে থাকে। তাই পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করলে পরিবেশের ওপর অবশ্যই এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। ছোট্ট প্রাণি হলেও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পিঁপড়ারও ভূমিকা রয়েছে। এ জন্য আমি বলব, অবাধে পিঁপড়া নিধন করা উচিত নয়।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ