লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ৬৯ শতক জমির পাকা ধান অবৈধভাবে কেটে নেওয়ায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে আসামিদের মধ্যে মাত্র একজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও ওইদিনই সকালে জামিন পেয়েছে। অন্য কোনো আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
শনিবার (১১ অক্টোবর) হাতীবান্ধা থানায় মো. শাহজামাল হক বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। তার বাবার নাম আব্দুল জলিল। তারা উপজেলার পারশেখ সুন্দর এলাকার বাসিন্দা। হাতীবান্ধা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহমুদুল-নবী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃত ওই ব্যক্তির নাম বাবুল হোসেন (৩০)। তিনি উপজেলার সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজশেখ সুন্দর এলাকার বাসিন্দা আক্কেল আলীর ছেলে।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- মৃত আক্কেল আলীর ছেলে মো. আব্দুল করিম (৪৮), মো. ফজল হক (৪০), আবুল হোসেন (৩৫)। মৃত জব্বার আলীর ছেলে আবু তালেব (৬০), মো. ফজল হকের ছেলে মো. আব্দুল মান্নান (৩৫), মো. শফিক (৩২) । নীলফামারীর ডিমলা থানার খড়িবাড়ি এলাকার আজিবর রহমানের ছেলে আসাদুল (৩৫)।
মামলার বিবরণে জানা যায়, শাহজামাল, তার স্ত্রী মোছা. শাফিয়া বেগমের চাচাতো ভাই জাহিদ হাসান এবং আতিক হাসানের (২৮) কবলা খরিদাসহ ভোগদখলীয় জমি মো. আনারুল ইসলাম বর্গা হিসেবে ভোগ দখল করে আসছেন। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ওই জমিতে আমন ধান রোপণ করেন বর্গাচাষি আনারুল ইসলাম। ধান পাকার পূর্ব থেকে ওই জমি-জমার বিরোধ নিয়ে গত ১০ অক্টোবর অনুমান সকাল ১১ টার দিকে আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠি, রড, ধারালো ছোরা নিয়ে জমিতে আসে। সঙ্গে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির ধান কাটা মেশিন ও ধান বহন করার টলি নিয়ে এসে অবৈধভাবে ধান কাটা শুরু করে। বর্গাচাষি আনারুল ইসলাম ধান কাটতে বাধা দিলে হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দেখিয়ে ভয় ভীতি দেখায় এবং খুন করার হুমকি দেয়। ভয় পেয়ে তিনি চলে আসেন। এরপর এক নম্বর আসামি আব্দুল করিমের নেতৃত্বে অন্য আসামিরা ৬৯ শতক জমির ৪০ মণ ধান (মূল্য ৫০ হাজার টাকা) কেটে নিয়ে যায়। এই বিষয়ে অনেকে দেখলেও তাদের সঙ্গে কথা বলার সাহস পায়নি। এ ঘটনায় গত ১১ অক্টোবর শনিবার ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী বর্গাচাষি আনারুল ইসলাম বলেন, ‘জমির মালিকের সঙ্গে অন্য একটি জমির বিরোধ চলছিল। ওই বিরোধের জের ধরে আমার ৬৯ শতক জমির ৪০ মণ ধান কেটে নিয়ে গেছে। এ বছর বৃষ্টির অভাবে ধান চাষ করতে অনেক খরচ হয়েছে। অনেক ঋণ করে ধান চাষ করেছি। এ কষ্টের ধান তারা অবৈধভাবে কেটে নিয়ে গেছে। আমি এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তপূবর্বক আমার ধান ফেরত চাই।’
জমির মালিক আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমার ছেলে শাহজামালের সঙ্গে অন্য একটি জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল আসামিদের। ওই জমির রায়ও আমার ছেলে পেয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে আমাকে বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছিল আসামিরা। আমি অন্যত্র ব্যস্ত থাকায় আমার বর্গা দেওয়া জমির পাকা ধান আসামিরা ভাড়াটে লোকজন নিয়ে এসে সন্ত্রাসী কায়দায় কেটে নিয়ে গেছে। এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ বিষয়ে আসামি আব্দুল করিম বলেন, আমার জমিনের ধান কেটে নিয়েছে তারা। এজন্য তার জমির ধান আমি কেটে নিয়েছি।এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদ হাসান বলেন, ধান কেটে নেওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধান উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও জানান, অসুস্থ থাকার কারণে তদন্তে যাননি এবং পূজার জন্য ব্যস্ত রয়েছেন, তদন্তে যাবেন।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ